সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৯:১২

সেই চুমুর আসল গল্প

মাথার টুপি আর পরনের কালো জামা দেখলে বেশ বোঝা যায় লোকটা নাবিক। তরুণীর পরনে নার্সের সাদা অ্যাপ্রোন। পায়ে জুতো আর লম্বা সাদা মোজা। সাদা আর কালো মিশে গেল গভীর এক চুম্বনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার অন্যতম প্রতীক হয়ে আছে এই নাবিক ও নার্সের প্রগাঢ় চুম্বনের ছবিটি। সেই ছবির আসল গল্পটা কি জানেন? জানেন কি, এই চুমুর মুহূর্তটি তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই নাবিক ও নার্স দুজন দুজনকে চিনতেনই না? যুগে যুগে রোমান্টিকতার অন্যতম প্রতীক ও প্রেরণা হয়ে থাকা ছবিটি আসলে তেমন রসাল নয়। এমনকি এই ছবি নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিতর্ক। অনেক দিন ধরে অজানা ছিল ছবির চরিত্র দুটির আসল পরিচয়। অনেক পরে জানা যায়, নাবিকটির নাম জর্জ মেন্ডোসা, নার্সের নাম গ্রেটা ফ্রিডম্যান।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ৯২ বছর বয়সে ফ্রিডম্যান মারা গেছেন। এ কারণে ছবিটি আবার আলোচনায় এসেছে। আবার আলোচনায় এসেছে সেই ছবির পেছনের গল্প, যা এখনো অজানা অনেকের।

১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে। অক্ষশক্তির অন্যতম বড় অংশীদারের এই আত্মসমর্পণে কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একরকম চূড়ান্ত পরিণতি ঠিক হয়ে যায়। এই আনন্দের খবরে সেদিন নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে নেমে আসে মানুষের ঢল। নানাভাবে তারা আনন্দ উদ্‌যাপন করতে থাকে। সেই সময়ই আলোকচিত্রী আলফ্রেড আইজেনস্ট্যাটের ক্যামেরায় বন্দী হয় এই বিখ্যাত মুহূর্তটি। আইজেনস্ট্যাট নিজেও পরে বিখ্যাত হয়ে যান। ভিজে ডের (জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ের দিনটি এ নামেই পরিচিত) মূল প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি।

‘লাইফ’ সাময়িকী বিজয় উদ্‌যাপন নিয়ে একাধিক ছবি ছেপেছিল সে সময়। তারই অংশ হিসেবে ছবিটি তোলা। কিন্তু বাকি সব ছবি ছাপিয়ে এটিই বিখ্যাত হয়ে যায়। ঘরে ঘরে পোস্টারে, ছবিতে, সিনেমায়, গানে, ভাস্কর্যে উঠে আসে মুহূর্তটি। কিন্তু ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত জানা যায়নি ছবির আসল দুই চরিত্রের নাম। জানা যায়নি, এই দুজন যে ছিলেন পরস্পরের অচেনা।

১৯৮০ সালের অক্টোবর সংখ্যায় ‘লাইফ’ সাময়িকী জানায়, সব মিলিয়ে ১১ জন পুরুষ ও তিনজন নারী দাবি করেছেন ছবিটিতে আসলে তাঁরাই ছিলেন। পরে নানা গবেষণা করে আসল দুজনকে পাওয়া যায়। জানা যায়, নাবিকটির নাম মেন্ডোসা, নার্সটি ফ্রিডম্যান। তখনই জানা যায়, একেবারে আকস্মিকভাবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্রিডম্যানকে চুমু খেয়েছেন মেন্ডোসা। ব্যাপারটির জন্য প্রস্তুতই ছিলেন না সে সময় এক দন্ত চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করা ২১ বছর বয়সী ফ্রিডম্যান।

এমনকি ছবিটা যখন তোলা হয়, পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মেন্ডোসার তখনকার প্রেমিকা ও পরবর্তী জীবনের স্ত্রী রিটাও। প্রেমিকার বদলে কেন ফ্রিডম্যানকে চুমু খেতে গেলেন মেন্ডোসা? এরও ব্যাখ্যা মেলে। একে তো তিনি মদে চুর ছিলেন, তার ওপর ঘটনার আকস্মিকতা ও খুশির বিহ্বলতায় এমন ঘটনা ঘটেছে। অনেকটা জোর করে চুমু খাওয়া কতটা নৈতিক, এটিও একধরনের যৌন হয়রানি কি না, এমন প্রশ্নও ওঠে। অথচ এই ছবি নিয়েই কত কত রোমান্টিক গালগল্প?

হয়রানির বিষয়টি অবশ্য ততটা আমলে নিতে দেননি ফ্রিডম্যান। ২০০৫ সালে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘এটাকে ঠিক সেই অর্থে চুমু বলা যাবে না। এটা ছিল স্রেফ একজনের উদ্‌যাপন। এটা মোটেও রোমান্টিক কোনো ব্যাপার ছিল না।’

তা হলে কী হবে, যুগে যুগে পপ সংস্কৃতিকে রীতিমতো আন্দোলিত করে গেছে এই মুহূর্ত। এমনকি সেই টাইমস স্কয়ারেই বসানো আছে মুহূর্তটি তুলে ধরা ২৫ ফুট দীর্ঘ ভাস্কর্য—আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার (নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত