সিলেটটুডে ওয়েব ডেস্ক

২৭ এপ্রিল, ২০১৫ ১০:০৭

বরফ খুঁড়লেই একের পর এক মৃতদেহ

ছবি: অভিযাত্রী সৌরভসিঞ্চন মণ্ডল

শনিবার রাত পর্যন্ত সমস্ত বেস ক্যাম্প চষে প্রায় ৬০ জন আহত অভিযাত্রীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন ভারতীয় বাঙালি পর্বোতারোহি দেবরাজ ও তাঁর দল । বেহালার দেবরাজ দত্ত, গত বছর খুম্বু আইসফলের দুর্ঘটনার জেরে এভারেস্ট অভিযান বাতিল করে ফিরেছিলেন। এ বছর ফের পাড়ি জমিয়েছিলেন স্বপ্নশৃঙ্গ ছোঁয়ার আশায়। ভাবতে পারেননি, বিপর্যয় আসবে এ বারও। আরও সামনে থেকে।

রবিবার টেলিফোনে বললেন, ‘‘অনেক চেষ্টায় কয়েকটা তাঁবু দাঁড় করিয়ে ওদের ঢোকাতে পেরেছিলাম। কিন্তু রাত্রে চোখের সামনেই মারা গেলেন বেশ কয়েক জন। ঠাণ্ডাটা সহ্য করতে পারলেন না। ঠাণ্ডাকে অনুভব মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’’

তুষার ধসের প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটার পরেই একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছিল ধ্বংসের ছবিটা। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছেন এটা বুঝতে পারার পরেই তছনছ হয়ে যাওয়া বেস ক্যাম্প থেকে আহতদের উদ্ধারের কাজে শেরপাদের সঙ্গে হাত লাগান দেবরাজরা। সঙ্গে ভারতীয় সেনার দল। এভারেস্ট অভিযানের জন্য তাঁরাও ছিলেন বেস ক্যাম্পে। তুষার ধসে চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁদের তাঁবুও, হারিয়ে গিয়েছে যন্ত্রপাতি। তবে সদস্যরা সবাই সুস্থ আছেন। আহতদের শুশ্রূষার জন্য এগিয়ে আসেন সেনা-চিকিৎসকও। রবিবার ভারতীয় সেনার ‘মৈত্রী’ অপারেশন চলেছে বেস ক্যাম্পে। দিনভর বরফ খুঁড়ে বার হয়েছে দেহ।

 

রবিবার দুপুরেই আরও এক বার কেঁপে ওঠে বেস ক্যাম্প। নুপৎসে শৃঙ্গ থেকে একটা ছোটখাটো তুষার ধসও নামে, কিন্তু নতুন করে বিপদ বাড়েনি বলেই জানান বেস ক্যাম্পের অভিযাত্রীরা। বিকেলে বেস ক্যাম্পের নীচে গোরকশেপে এসে দেবরাজ দত্ত জানালেন, ২২টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রায় ৬০ জন আহত অভিযাত্রীকে রবিবার আকাশ পথে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়েছে। দেহগুলি এখনও বেস ক্যাম্পে রয়েছে। সোমবার আবহাওয়া ভাল থাকলে সেগুলি কাঠমান্ডু পাঠানোর কথা। অনেক অভিযাত্রী এখনও নিখোঁজ।

চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল দেখে এখনও আতঙ্ক কাটাতে পারেননি ব্যারাকপুরের গৌতম ঘোষ। বেস ক্যাম্পের পাশেই পুমরি শৃঙ্গের ঢাল বেয়ে যখন বরফের বিশাল স্রোতটা ধেয়ে আসতে দেখেছিলেন, এক মুহূর্তের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে উঠেছিল গত বছরের খুম্বুর ছবিটা।  ‘‘রক্তমাখা অবস্থায় বরফ-চাপা ভাঙা তাঁবুর তলা থেকে টেনে টেনে বার করা হচ্ছিল ওঁদের। কারও নিশ্বাস পড়ছিল। কারও নয়। আর মৃত্যু দেখতে চাই না এভারেস্টে।’’ গলা ভেঙে এল কলকাতা পুলিশের কর্মচারী গৌতমের। শনিবার সন্ধের মধ্যেই গোরকশেপে নেমেছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ যুব কল্যাণ দফতরের পর্বতারোহণ শাখার উপদেষ্টা উজ্জ্বল রায় জানান, সোমবার হয়তো সরকারি প্রতিনিধিদের কাঠমান্ডু পাঠানো হবে বাঙালি এভারেস্ট অভিযাত্রীদের উদ্ধারকাজে তদারকি করার জন্য।

নেপাল দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, সরকারি ভাবে অভিযান ‘বাতিল’ ঘোষণা না করা হলেও বেস ক্যাম্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে অভিযান এগোনো মুশকিল। বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ওয়ানে যাওয়ার পথও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে নেপালের শেরপা সংগঠন সূত্রের খবর।

 

এবিপি আনন্দ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত