ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৪ মে, ২০১৫ ০০:১২

ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে কিন্তু প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা পায়নি নেপাল

ভূমিকম্পের আঘাতে মানবিক দূর্যোগের মধ্যে পড়া নেপাল বিভিন্ন দেশের ত্রাণ সহায়তা পেলেও প্রতিশ্রুত কোন অর্থ সহায়তা পায়নি। দেশটির অর্থমন্ত্রী রাম শর্মা মাহাত বলেছেন, তারা হেলিকপ্টার আর ত্রাণ পেয়েছেন, কিন্তু টাকা নয়। এখন জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় সরঞ্জাম আর অর্থপেডিক চিকিৎসক দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র ১.২৫ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্য ১.৫০ কোটি ডলার, ইইউ ৩২ লাখ ডলার, নরওয়ে ৩৯ লাখ ডলার, কানাডা ৪১ লাখ ডলার, চীন ৩৪ লাখ ডলার, অস্ট্রেলিয়া ৪৫ লাখ ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়া ১০ লাখ ডলার।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠমান্ডু এখন ধ্বংসস্তূপের নগরী। ভূমিকম্পের আঘাতে বিপর্যস্ত শহরটির যেদিকে তাকানো যায় শুধু ধসেপড়া ভবন। আগের অবস্থায় শহরটিকে ফিরিয়ে নিতে দরকার অন্ততপক্ষে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে অবকাঠামোগত পূর্বরূপে ফিরিয়ে আনার জন্য আনুমানিক এই পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী রাম শর্মা মাহাত। মাহাত বলেন, এটি প্রাথমিক ধারণা। কী পরিমাণ অর্থ লাগাবে তা ক্ষতির পরিমাণ ও পুনর্নির্মাণ ব্যয় বিবেচনা না করে বলা সম্ভব নয়।

তবে মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলছে, নেপালের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০০ থেকে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার। জিডিপির হিসেবে গড়ে ৩৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য ও গবেষণা সংস্থা আইএইচএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে হিমালয়কন্যা নেপালের মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ২০ শতাংশ।

জাতিসংঘ নেপালের জন্য ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউনিসেফ চেয়েছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কৃষকদের জন্য ৮০ লাখ ডলার অনুদান চেয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে তাঁবু, কম্বল, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ এরই মধ্যে ৮০ টনের বেশি জরুরি পণ্য বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে, নেপালে প্রতিদিনই আসছে বিদেশী সহযোগিতা। তবে অভিযোগ উঠছে, দুর্গত অঞ্চলে সরকার সময়মতো ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী অফিসের কর্মকর্তা পূর্ণ শংকর বলেন, কিছু দুর্গত অঞ্চলে গ্রামবাসীরা এতই ক্ষিপ্ত ও ক্ষুধার্ত যে তারা ওষুধ ও খাবার বহনকারী গাড়িতে পাথর ছুড়ে মেরেছে।"

ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছে, কাঠমান্ডুর পশ্চিমের গ্রাম সুন্দরখোলায় খাদ্য সংকট এতই যে, মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। সুপেয় পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) ৭.৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে নেপালের ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে, যা ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পের মৃতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

১৯৩৪ সালের ওই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন সাড়ে ৮ হাজার মানুষ। নতুন করে সব কিছু আবার তৈরি করার ব্যয় হবে বিপুল। প্রতিটি নিহতের পরিবারকে ১৪০০ ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টাকা সহায়তা দিচ্ছে নেপাল সরকার। এর আগে নেপালের একজন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত