বিবিসি বাংলা

০৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০২:৪০

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় আজ

ভারতের অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি একটি মসজিদের জমির মালিক কারা শনিবার সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি করবে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হয়েছে যে শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবে।

বিতর্কিত জমিটি নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার ঠিক ৭০ বছর পরে অবশেষে রায় দিচ্ছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

আগামী সপ্তাহেই অবসর নেবেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তার আগেই যে তিনি এই ঐতিহাসিক এবং সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিতে চান, সে ঘোষণা আগেই করেছিলেন গগৈ।

কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।

১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।

এদিকে, রায়ের আগে হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা ঘোষণা করেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের রায় তারা মেনে নেবেন। কিন্তু তার পরও আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা শহর সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন, তা জানতে প্রধান বিচারপতি শুক্রবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আর পুলিশ মহা-নির্দেশককে। এরআগে বৃহস্পতিবারই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পদস্থ পুলিশ আর প্রশাসনের কর্তারা কথা বলেছেন জেলাগুলির সঙ্গে।

মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, যে ৩৮টি জেলা এমনিতেই সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল, সেখানে বাড়তি বাহিনী নামানো হয়েছে। টহল চলছে দিন রাত। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যারা উত্তেজনা ছড়াতে পারে, এমন লোকদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমেও যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে। লখনউ আর জেলা সদরগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর বলছে, দুটি হেলিকপ্টার তৈরি রাখা হচ্ছে, যার মধ্যে একটি থাকবে অযোধ্যায়। পুলিশের বন্দুক-গুলি-কাঁদানে গ্যাসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাজসরঞ্জামও পরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

যে শহরকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে সেই অযোধ্যা বিশেষ করে যে জমিতে বাবরি মসজিদ ছিল, সেখানকার নিরাপত্তাও কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। মাসখানেক ধরেই অযোধ্যা শহরে ১৪৪ জারি রয়েছে।

এমনিতেই বিতর্কিত জমিটির কাছাকাছি যাওয়া যায় না সহজে। চারদিকে লোহার বেড়া আছে। ২৪ ঘণ্টা সেটিকে ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকশো সদস্য। আর এখন হাজার হাজার বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে অযোধ্যায়।

তবে শহরের সাধারণ হিন্দু আর মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই যে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন, সেটা কথা বলে বুঝতে পেরেছেন বিবিসি-র সংবাদদাতারা।

বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।

জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়।

এরপরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে - দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে। একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয় বেঞ্চ। অবশেষে ৭০ বছরের পুরনো সেই বিরোধের নিষ্পত্তি করতে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত