সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ২৩:৫২

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

যশোরের পলাতক ৬ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ, কারাগারে আছেন সাখাওয়াত হোসেন এবং আরও ২

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক যশোরের ৬ জনকে আত্মসমর্পণ করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জন আসামি। গত ৮ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। মোট ১২ আসামির মধ্যে বাকি তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন।  

সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া অন্য আটজন আসামি হলেন- মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, মো. আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুৎফর মোড়ল এবং মো. আব্দুল খালেক মোড়ল।
 
তাদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনসহ তিনজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি দু’জন হচ্ছেন- মো. বিল্লাল হোসেন ও মো. লুৎফর মোড়ল।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পলাতক ৬ জনকে আত্মসমর্পণের জন্য সাতদিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

গত ২৬ জুলাই ১২ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। এতে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

গত ১৬ জুন সাখাওয়াতসহ যশোরের কেশবপুরের ১২ জনের বিরুদ্ধে এ মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা।

সাখাওয়াতসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৯ সালে যশোরে মামলা দায়ের করা হয়। প্রসিকিউশনের আবেদনে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

২০১২ সালের ১ এপ্রিল থেকে এ মামলায় তদন্ত শুরু করে গত ১৩ জুন শেষ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান।

সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে একই অপরাধে আরও ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এ মামলায় মোট আসামি হন ১২ জন। প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১২ মে বাকি ১১ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ওইদিন রাতেই তাদের মধ্যে তিনজন ও গত ২৭ সেপ্টেম্বর একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে বর্তমান আসামি ৯ জন হওয়ায় গ্রেফতারকৃত দু’জন অব্যাহতি ও মুক্তি পেয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩২ জনকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।

সলেমান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১ নভেম্বর

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও পলাতক মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে আগামী ১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
 
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৪৫ দিনের সময়ের আবেদন জানান। শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে  এ দিন ধার্য করেন।
 
এ সময় আসামি সলেমান মৌলভীর পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান ও গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
 
গত ১৪ জুন সলেমান-ইদ্রিসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভীকে(৮৫) গ্রেফতার করা হলেও ইদ্রিস আলী সরদার পলাতক।

গত ২৮ জুলাই দুই আসামির বিরুদ্ধে আরও এক দফা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা।

ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সলেমান মৌলভীকে।

২০১০ সালে শরীয়তপুরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদারের দায়ের করা যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রধান আসামি সলেমান মৌলভী।

রাজাকার সলেমান ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ আরও সাতজন রাজাকারের (এদের অনেকেই মারা গেছেন) বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া, কাশাভোগ, মানোহর বাজার, মধ্যপাড়া, ধানুকা, রুদ্রকরসহ হিন্দু প্রধান এলাকাগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় রাজাকাররা। ওইসব গ্রামের নয়জনকে হত্যায় সহায়তা করেন আসামিরা। তারা শহীদদের অবস্থান দেখিয়ে দেন, আর পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। একইদিন তারা তিন শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষণ চালান।
 
আরও অভিযোগ রয়েছে, একাত্তরে তারা মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলে রাজাকার হিসেবে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। তাদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা এলাকার কয়েকশ’ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে। নারীদের হত্যার আগে ক্যাম্পে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

রিয়াজ-ওয়াজের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১২ নভেম্বর

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গ্রেফতারকৃত রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১২ নভেম্বর জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
 
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দুই মাসের সময়ের আবেদন জানান প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। এর প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেরও অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল।
 
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফুলবাড়িয়ার রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ হাজী ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজউদ্দিন ফকির এবং ওয়াজউদ্দিন একটি মামলার আসামি। ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর  গত ১১ আগস্ট আমজাদ ও রিয়াজকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ ও ভালুকজান গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ থেকে দুই আসামিকে নিয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যান। এতে চার পুলিশ ও আসামি আমজাদ হাজী গুরুতর আহত হন। পরে আমজাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান তিনি।

ফলে বর্তমানে রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিন এ মামলার আসামি।

উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শহীদ তালেব মণ্ডলের ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা তালেব মণ্ডলকে আখিলা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করেন থানা রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজ ফকিরের নেতৃত্বে ওয়াজউদ্দিনসহ রাজাকাররা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমজাদ আলী, রিয়াজউদ্দিন ফকির ও ওয়াজউদ্দিন হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। আছিম যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু মানুষকে হত্যা ও পাটিরায় দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

নেত্রকোনার সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ নভেম্বর

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ৭ আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৫ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
 
একই মামলার ওই সাত আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান (৭৫) ও আহমদ আলী (৭৮)। পলাতক পাঁচ আসামি হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার, কবির খান, মো. নুরুদ্দিন ওরফে রুদ্দিন এবং ছালাম বেগ।
 
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দুই মাসের সময়ের আবেদন জানালে চেয়ারম্যান বিচারপতি  আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন।
 
একইসঙ্গে প্রসিকিউটর বাদল আসামি আহমদ আলীকে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতির আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন গ্রহণ করে আসামিকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।  ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে অপর আসামি আব্দুর রহমানকে।
 
এ সময় আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান এবং গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
 
গত ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান (৮০) ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে (৭৮) যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদেরকে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা রয়েছে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাদির বাদী হয়ে ২০১৩ সালে চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও পরে তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে মোট আসামি হন সাতজন।

গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির।

বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের খোঁজ খবর জানতে চান। ভাইদের কোনো খোঁজ না দেওয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুই দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন ২১ আগস্ট তাকে জারিয়া কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেন রাজাকাররা।

জামালপুরের ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি শেষ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ৭ অক্টোবর আসামিপক্ষের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একই মামলার আট আসামির মধ্যে দু’জন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই এবং এস এম ইউসুফ আলী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পলাতক বাকি ছয়জন হলেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আব্দুল হান্নান, মো. আব্দুল বারী, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেম। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তারা আত্মসমর্পণ করেননি বা গ্রেফতার হননি।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান গ্রেফতার হওয়া অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই ও এস এম ইউসুফ আলীর পক্ষে এ ওয়াই এম মশিহুজ্জামান, পলাতক মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন ও মো. আব্দুল হান্নানের পক্ষে আব্দুস সোবহান তরফদার এবং মো. আব্দুল বারী, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেমের পক্ষে কুতুবউদ্দিন আহমেদ।      

আগামী ৭ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষের শুনানির দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

গত ২৯ এপ্রিল ওই আট আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে  হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও মরদেহ গুমের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠন, স্থানীয় সাধনা ঔষধালয় দখল করে আলবদর বাহিনী ও শান্তি কমিটির কার্যালয় স্থাপন এবং সিংহজানি হাইস্কুলে আলবদরদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এছাড়া পিটিআই হোস্টেল ও আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল দখল করে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে সেগুলোতে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঘটনার ৩৪ জন ও জব্দ তালিকার ৬ জনসহ মোট ৪০ জন সাক্ষী ৮ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা দু’জন মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পলাতক বাকি ছয়জন ছিলেন আলবদর বাহিনীর। গ্রেফতারকৃত অ্যাডভোকেট শামসুল আলম জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির এবং এস এম ইউসুফ আলী সাবেক জামায়াত নেতা ও সিংহজানি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক।

মামলাটির প্রধান আসামি পলাতক আশরাফ হোসেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তার মাধ্যমেই মূলত ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মামলাটি দায়েরের পর থেকেই তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

এছাড়া পলাতক অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ৩ মার্চ আশরাফ হোসেনসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযান চালিয়ে  জামালপুর শহরের নয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে ও ফুলবাড়িয়ার জাহেদা শফির মহিলা কলেজ গেট প্রাঙ্গণ থেকে ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত