সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:২৩

‘বায়ুবাহিত করোনা’ ঠেকাতে এবার মাস্ক বদলের পরামর্শ

বায়ুবাহিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এন৯৫ বা কেএন৯৫ মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের রোগ সংক্রমণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহিম ইউনুস।

চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট বৃহস্পতিবার এক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ ২ প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসটি বায়ুবাহিত হওয়ার কারণে প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডা. ইউনুস শনিবার এক টুইট বার্তায় করোনা ঠেকাতে উন্নত মাস্ক পরার পরামর্শ দেন বলে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ডা. ইউনুস বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই, আমরা জানি কোভিড ড্রপলেট (হাঁচি-কাশির অণুকণা) থেকে বাতাসে ছড়িয়ে যায়। এর সমাধান হলো দুটি এন৯৫ বা কেএন৯৫ মাস্ক কিনুন। একদিন একটি মাস্ক ব্যবহার করে পরের দিনে ব্যবহারের জন্য অন্যটি একটি কাগজের ব্যাগে রেখে দিন। এভাবে ২৪ ঘণ্টা পরপর দুটি মাস্ক একের পর এক ব্যবহার করুন। মাস্ক ঠিকঠাক থাকলে, নষ্ট না হলে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সেগুলো ব্যবহার করা যায়। কাপড়ের মাস্ক বাদ দিন।’

ল্যানসেটের প্রতিবেদন বিষয়ে ডা. ইউনুস আরেক টুইটে লেখেন, ‘বায়ুবাহিত অর্থ এই না, বাইরের বাতাস দূষিত হয়ে গেছে। বরং বায়ুবাহিত অর্থ বাতাসে ভাইরাসটি থাকতে পারে, বিশেষ করে ঘরের ভেতরে, যা কি না ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের পার্ক ও সাগর সৈকত এখনও মাস্ক ছাড়া চলাচলের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দুই ব্যক্তির মধ্যে ছয় ফুট দূরত্ব থাকতে হবে।’

কী ছিল ল্যানসেটের প্রতিবেদনে

ল্যানসেটে প্রকাশিত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় বিশেষজ্ঞে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, খোলা জায়গার চেয়ে আবদ্ধ পরিবেশেই করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায়। গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের প্রাইমারি কেয়ার হেলথ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ট্রিস গ্রিনহালজ।

গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের ডিপার্টমেন্ট অফ কেমেস্ট্রি অ্যান্ড বায়োকেমেস্ট্রির অধ্যাপক হোসে লুইস জিমেনেজ বলেন, ‘বাতাসের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ আমাদের চমকে দিয়েছে। আমরা আরও প্রমাণ পেয়েছি, বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ বলতে গেলে একদম নেই। ’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্য জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উচিত নতুন বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে গ্রহণ করা, আর সেটা ঘটলে বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনার উপায়ের দিকে সবাই মনোযোগ দিতে পারবে।’

গবেষক দলটি তাদের দাবির সপক্ষে ১০টি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে গত বছরের মার্চে ওয়াশিংটনের একটি চার্চে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের ঘটনা, যেখানে একজনের থেকেই ৫৩ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দীর্ঘ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংক্রমিত মূল ব্যক্তির কাছাকাছি না থেকেও বাকিরা কোভিড ১৯ সংক্রমিত হয়েছিলেন। সেখানে বদ্ধ পরিবেশে বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছিল বলে ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রিস গ্রিনহালজের দলটি বলছে, উন্মুক্ত পরিবেশের চেয়ে আবদ্ধ জায়গায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর মাত্রা অনেক বেশি। আবদ্ধ জায়গায় বাতাস চলাচলের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে এই সংক্রমণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, কোভিডের যত সংক্রমণ, তার প্রায় ৪০ শতাংশই ঘটছে উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে। এই উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের হাঁচি-কাশি নেই, এটাও ভাইরাসের বায়ুবাহী সংক্রমণের বিষয়টিকে সমর্থন করে।

গবেষণা প্রতিবেদনে হোটেলে পাশাপাশি কক্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার উদাহরণ দেয়া হয়েছে, যারা কখনওই একে অপরের মুখোমুখি হননি বা সংস্পর্শে আসেননি।

এর পাশাপাশি গবেষক দল বলছে, তারা ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর সামান্য কিছু প্রমাণ পেয়েছেন, গবেষণার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এভাবে কোভিড ১৯ সংক্রমণের প্রমাণ মেলেনি।

গবেষক দলের প্রধান ট্রিস গ্রিনহালজ বলেন, ‘আমরা তরলের গতিশীলতা এবং সক্রিয় ভাইরাসের বিচ্ছিন্নতার মতো অত্যন্ত জটিল বিষয় সংক্রান্ত নথিপত্রের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা থাকলেও সামগ্রিকভাবে বায়ুবাহিত সংক্রমণের প্রচুর ও শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

বায়ুবাহিত এই সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর দেরি করা ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন গ্রিনহালজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত