সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৬ ১৭:৩৬

ঈদের আনন্দে পানিতে নামতে সতর্ক থাকুন

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে ছুটি। আর ছুটি মানেই বেড়াতে যাওয়া। একঘেয়ে জীবন থেকে কয়েক দিনের জন্য মুক্তি। ইচ্ছে মতন ছুটে বেড়ানো। আহা, কী আনন্দ!

সমুদ্র, নদীর বরাবরই এক সম্মোহনী ক্ষমতা আছে। মানুষ তাই প্রচণ্ড আকর্ষণ বোধ করে পানির প্রতি। কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ঈদের এই ছুটিতে যাচ্ছেন পানির কাছে। জলে ভাসাবেন নিজেকে। শীতল হবে দেহ ও মন। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, জাফলং অনেকেরই বেড়ানোর জন্য প্রথম পছন্দ। তাঁরা হয়তো ইতিমধ্যে তল্পিতল্পা গুছিয়েও ফেলেছেন। অনেকে হয়তো চলেও গেছেন পছন্দের জায়গায়।

এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। তাই যাঁরা পানির কাছে যাবেন, তাঁদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, জাফলংয়ের পিয়াইন নদসহ গ্রামের বাড়ির পুকুরেও গোসল করতে অথবা সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেকে মারা গেছেন। আনন্দ পরিণত হয়েছে বিষাদে।

গত বছর ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতের কাছে সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে মারা যান নাট্যকার ফারুক হোসেনসহ আরও দুজন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন কক্সবাজারের সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। একই বছর ঈদের ছুটিতে মুন্সিগঞ্জে নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পুকুরে সাঁতার কাটতে নামে সাত বছরের আজমির। কিন্তু তার আর সাঁতার কাটা হয়নি। পানিতে ডুবে মারা যায় আজমির। ওই ঈদেই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দুই শিশু মারা যায় পুকুরের পানিতে ডুবে। ১২ বছরের ইফতি কাজী ফরিদপুর জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ১৪ বছরের সামি রাজধানীর একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। জাফলংয়ের পিয়াইন নদে গোসল করতে গিয়ে পাঁচ পর্যটকের মৃত্যু হয়। পরে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসন পানিতে নামতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সূত্রমতে, গত এক দশকে পিয়াইন নদে গোসল করতে নেমে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।

নানা কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ সাঁতার না জেনেই পানিতে নেমে পড়েন। কেউ আবার ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান। কারও জীবন আবার চলে যায় চোরাবালির ফাঁদে পড়ে। কেউ আবার রাতের অন্ধকারে সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে মারা যান।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভের (বিএইচআইএস-২০০৫) প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এ ছাড়া এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে। তাই এ সময় অতিরিক্ত সাবধানতা দরকার।

বেড়াতে যাওয়ার আগে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। তাই সমুদ্রে, নদীতে অর্থাৎ পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকবেন। সমুদ্রে নামার সময় জোয়ার-ভাটার বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখুন। অনেকে মিলে গেলে সবার প্রতি খেয়াল রাখুন। অতি উচ্ছ্বাস বা অতি সাহস দেখানো থেকে বিরত রাখুন নিজেকে। সাঁতার না জানলে পাড়ের কাছাকাছিই থাকুন। আবার যাঁরা সাঁতার জানেন, তাঁরাও বেশি বীরত্ব দেখাতে গিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেবেন না। বেঁধে দেওয়া সীমার বাইরে গিয়ে সাঁতার কাটবেন না। খেয়াল রাখবেন আপনার ঈদের আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত না হয়।
সূত্রঃ প্রথমআলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত