একুশ তাপাদার

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:৩৬

দ্যা বাইসাইকেল রাইডার

বাইসাইকেল প্রসঙ্গ এলেই প্রথমেই মনে পড়ে ভিত্তোরিও দি সিকার বিখ্যাত চলচ্চিত্র – ‘দি বাইসাইকেল থিফ’ এর কথা । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাইসাইকেলের নগরী খ্যাতি পাওয়া ইতালির রোম শহরের বাবা-ছেলের মর্মস্পর্শি সেই কাহানী ভেসে আসে চোখের সামনে।  পৃথিবীতে অনেক শহর আছে যেখানে শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে বেশিরভাগ মানুষেরই বাহন বাইসাইকেল । হয়ত বাইসাইকেল নিয়ে আছে এমন  আরও অনেক গল্প । এরকমই কয়েকটি শহর জার্মানির বার্লিন, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন , কানাডার মন্ট্রিল, স্পেনের সেভিলা। যেসব শহরে নানা কারনেই বাইসাইকেল অত্যাধিক জনপ্রিয় এবং অদ্বিতীয় চলার বাহন।


ছবিঃ কাজী অহিদ

বিভিন্ন রকমের যানবাহনের চাপ নিতে গিয়ে যেখানে পৃথিবীর বড় অনেক শহরই নেতিয়ে পড়ছে , যেখানে ইঞ্জিন চালিত এসব যানবাহনের ক্ষতিকর প্রভাবে পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব তৈরি হচ্ছে কিংবা ঢাকার মত জনবহুল শহরে ঘন্টার পর ঘন্টা জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘ট্রাফিক জ্যাম’ নামক বিড়ম্বনায় । এই অবস্থায় কাছাকাছি দূরত্বে চলাচল করার জন্য সারা বিশ্বেই আবার নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে বাইসাইকেল ।


ছবিঃ কাজী অহিদ

আমাদের দেশে বাইসাইকেল চালানোকে এখনো শ্রেণীবদ্ধ চোখে দেখা হয় , যদিও ঢাকায় গত কয়েক বছর থেকে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু সাইকেল কমিউনিটি যার কারনে বাইসাইকেলের গন্ডির ব্যপ্তি ঘটছে খুব দ্রুত ।
আশার কথা আমাদের সিলেট শহরেও সাম্প্রতিক সময়ে এরকম একটি কমিউনিটি গড়ে উঠেছে ।

"ride for green, ride for life" শ্লোগান সামনে নিয়ে কাজি অহিদ, মুবিন রহমান আর আব্দুল্লাহ আল ইমরানের উদ্যোগে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে যাত্রা শুরু করে Cyclomania Cycling Socity যা পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সিলেট সাইক্লিং কমিউনিটি Sylhet Cycling Community (SCC) নামে ধারন করে। যার কারন ছিল তারা কোন এক বিন্দুতে আবদ্ধ থাকতে চাইলেন না। বছরখানের মধ্যেই হাজার খানেকের উপর সদস্য যুক্ত এই কমিউনিটি এখন শহর সিলেটের সাইক্লিষ্টদের অক্সিজেনের মত । যেখানে আছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , ব্যবসায়ী, শিক্ষক সহ নানান পেশার মানুষ । আছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সদস্য । শহরের রাস্তায় বাইসাইকেল চালাচ্ছেন কোন তরুনী কদিন আগেও যা কল্পনা করা যেত না । সেই জায়গায় মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছেন ৪০/৫০ কিলোমিটার দূরের রাইডিং এ ! সাইক্লিষ্ট ডাক্তার ওরকাতুল জান্নাত বলেন – ‘সিলেট এখনো মেয়েদের  বাইসাইকেল চালানোকে স্বাভাবিকভাবে দেখেন না অনেকেই, কেউ কেউ তো আজেবাজে মন্তব্যও করে তবু বাইসাইকেলের টানে তারা বেরিয়ে পড়েন’ । তিনি চান মেয়েদের জন্যও সাইকেল চালানো আরও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠুক , পাল্টে যাক দৃষ্টিভঙ্গি ।

Sylhet Cycling Community এর অন্যতম মডারেটর কাজি অহিদ এবং আরিফ আখতারুজ্জামান  বলেন- আমরা চাই সাইক্লিষ্টদের সংখ্যা বাড়ুক , সিলেট হয়ে উঠুক সাইকেলের নগরী কারন বাইসাইকেল এর মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হয়না, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়, নিয়িমিয় শারীরিক ব্যায়াম হয় ।’ তিনি জানান তাদের কমিউনিটির সাইক্লিষ্টরা বিভিন্ন রকম সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন । কখনও তামাবিল, কখনও বিছানাকান্দি কিংবা কোনদিন আবার বাদাঘাট, যখন যেদিকে তাদের ছুটে চলতে ইচ্ছে করে। বাইসাইকেল চালিয়ে চলে যান তারা দূর বহুদূরে । শুধু সৌখিন ঘোরাঘুরি করেই দায়িত্ব শেষ না করে সিলেট সাইক্লিং কমিউনিটি বিভিন্ন সমাজ সেবা ও সচেতনা মূলক কাজেও অংশ নিয়ে থাকে।

সিলেটের সাইক্লিষ্টদের চাওয়া বাইসাইকেলের জন্য তৈরি হোক আলাদা লেন। দুর্ঘটনা রোধে সব সাইক্লিষ্টরা ব্যবহার করুক হেলমেট । বিস্তার লাভ করুক বাইসাইকেল চালানোর অভ্যাস ।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত