রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্দামান ও ভারত মহাসাগরে কিছু হলেও দাতা সংস্থা আর মানবাধিকার সংগঠনগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘আন্দামান ও ভারত মহাসাগরে কোনো সমস্যা হলেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবখানা এমন যে আমরা যেহেতু আগের ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি তাই তাদেরও যেন ঠাঁই দেই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলে দিয়েছি যে আর পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নেই। অন্য দেশগুলোরও দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গা শুধু আমাদের একারই সমস্যা না, এটা সারা বিশ্বের সমস্যা। সমুদ্র তীরবর্তী অন্য দেশগুলো তাদের নিতে পারে। কিংবা যারা আমাদের আদেশ-উপদেশ দেন তারাও নিতে পারেন। তাদের জায়গার কোনো অভাব নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় হলো ২,০০০ ডলার এবং প্রতি বর্গমাইলে ১,২০০ লোক বসবাস করে। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্ষিক আয় হলো ৫৬ হাজার ডলার এবং সেখানে প্রতি বর্গমাইলে বাস করে মাত্র ১৫ জন। তারা তাদের (রোহিঙ্গা) নিচ্ছেন না কেন? রোহিঙ্গাদের ভালো জীবন দিতে চাইলে আপনারা তাদের নিয়ে যান। রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

শুক্রবার মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা ভাসানচরে নিলে রাখাইনে তারা যে ধরনের কাজ করত সে ধরনের কাজ করতে পারবে। সেখানে তারা মাছ ধরা, কৃষিকাজ করা এবং গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি লালন পালনের মতো অর্থনৈতিক কাজ করতে পারবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে প্রচুর খোলামেলা ও সুন্দর জায়গা রয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ আছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘একটা সমস্যা আছে, তা হলো যাওয়া-আসায় সমস্যা। সেখানে যেতে এখন সমুদ্রপথে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। আমরা বোট সার্ভিস চালু করব। তাদের তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই। চাইলে তারাও তো এ সার্ভিস চালু করতে পারেন। তারা এ সার্ভিস চালু করছেন না কেন?’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন যেখানে আছে তা নিয়ে আমাদের সবসময়ই চিন্তায় থাকতে হয়। সেখানে অতিবৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকে। এতে রোহিঙ্গাদের মারা পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। কোনো রোহিঙ্গা মারা গেলেও দোষ আমাদের ওপর আসবে।’

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে দাতা সংস্থার আপত্তির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, তাদের বিরোধিতা করার একটি কারণ হলো ভাসানচরে কোনো বিলাসবহুল হোটেল সুবিধা নেই।

দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কুতুপালংয়ে থাকলে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের নামীদামী হোটেলে তারা থাকতে পারেন। দায়িত্ব পালন শেষে সেখান থেকে বিকাল ৩টায় কক্সবাজারে চলে এসে বাকি সময় তারা আড্ডা এবং ঘুমিয়ে কাটাতে পারেন।

ভাসানচরের বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের আরেকটা অভিযোগ, খাবার-দাবার দিতে গেলে জাহাজে করে নিতে হবে। এতে তাদের খরচ বেশি হবে। তবে, আমি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফও) প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন খরচটা তত বেশি না।’