সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৯:২৫

২ শতাংশের কম শেয়ার থাকলে ছাড়তে হবে পরিচালকের পদ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির পরিচালকের হাতে ২ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে তাদের পদ ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। তিনি বলেছেন, যেসব পরিচালকের হাতে ২ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে তাদের তালিকাও স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে সেই নির্দেশ দেওয়া হবে।

শনিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় এ কথা জানান।

বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ ও উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে নতুন করে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশনার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও যারা ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবেন তাদের অপসারণ করা হবে। এ আইন পরিপালনের জন্য কিছু পরিচালক আর্থিক–সংকটের কথা জানিয়ে বাড়তি সময় চেয়েছেন। আমরা তাদের সময় দিচ্ছি। আর যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার কিনবেন না, তাদের সরে যেতে হবেই। প্রয়োজনে আমরা কোম্পানির বোর্ড ভেঙে দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে সেই বোর্ড পুনর্গঠন করব।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারা খারাপ উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজারে এসে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, বছরের পর বছর কোম্পানি ভালোভাবে চালাচ্ছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে যেসব স্বতন্ত্র পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করেননি। এটি সত্যিই দুঃখজনক।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে মনিরুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বেশি দরকার ভালো কোম্পানির। শেয়ারবাজারে কত কোম্পানি আছে, তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো ভালো কোম্পানি আছে সেটি। পরে আলোচনায় অংশ নেওয়া একাধিক বক্তা ভালো কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সম্পদ ব্যবস্থাপক সমিতির সভাপতি হাসান ইমাম, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান ও মিনহাজ মান্নান, সংস্থাটির সাবেক পরিচালক আহমেদ রশীদ, বিএমবিএর মহাসচিব রিয়াদ মতিন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ার ধারণের আইন করে বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। ধসের পর ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। খায়রুল কমিশন ন্যূনতম শেয়ার ধারণের আইন করলেও সেই আইন অমান্য করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির পরিচালক দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। আবার আইন হওয়ার পরও অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক ঘোষণা ছাড়াই সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে আইন করলেও সেই আইন পরিপালনে কার্যকর কোনো উদ্যোগই ছিল না। টানা ৯ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত মে মাসে খায়রুল হোসেনের উত্তরসূরি হিসেবে বিএসইসির নেতৃত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। গত মে মাসে দায়িত্ব নিয়ে তিনি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের আইনের বাস্তবায়নের উদ্যোগের পাশাপাশি বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। শিবলী রুবাইয়াতের দায়িত্ব গ্রহণের পর ঝিমিয়ে পড়া শেয়ারবাজারে গতি ফিরে আসে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত