সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:৫০

আহমদ শফীর দায়িত্বে তিন শিক্ষক

হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস পদে বাবুনগরী

মৃত্যুর একদিন আগে শাহ আহমদ শফীর পদত্যাগে শূন্য দারুল উলূম মঈনূল ইসলাম মাদ্রাসার (হাটহাজারী মাদ্রাসা) মহাপরিচালক বা মুহতামিম পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। তিন শিক্ষকের কমিটিকে মাদ্রাসা পরিচালানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আহমেদ বাবুনগরীকে ফেরানো হয়েছে। তাকে মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিবের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

শনিবার আহমদ শফীর দাফনের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির ১১ সদস্যের ৮ জন বৈঠকে অংশ নেন। শুরা সদস্য মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

তিনি জানিয়েছেন, মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান মুফতি আবদুস সালাম, সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ এবং মাওলানা ইয়াহইয়াকে নিয়ে গঠিত কমিটি। তারা মাদ্রাসা পরিচালনা করবেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের সবার সমান অধিকার থাকবে। কেউ এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

মহাপরিচালক পদ ছাড়ার একদিন পর গত শুক্রবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শফী। শনিবার লাখো মানুষের জানাজা শেষে তাকে সাড়ে ছয় দশকের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসার উত্তর মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। এরপর মাদ্রাসার ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্ধারণে বৈঠকে বসে শুরা কমিটি।

দু'দিনের ছাত্র আন্দোলনের পর গত বুধবার ছেলে আনাস মাদানীকে শিক্ষা সচিব পদ থেকে সরিয়ে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করেছিলেন আহমদ শফী। রোববার শুরার সিদ্ধান্তে, এ পদে এসেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এর মাধ্যমে তিনি আবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় ফিরলেন। আনাস মাদানীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। গত জুনে তাকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। আহমদ শফী আমৃত্যু মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ছিলেন। মাওলানা বাবুনগরী এ পদেও দায়িত্ব পালন করবেন।

হেফাজত সূত্র জানিয়েছে, আহমদ শফীর উত্তরসূরী কে হবে তা নিয়ে আগ্রহ ও বিরোধ দুই-ই রয়েছে। শুরা কমিটি বিরোধ এড়াতে মহাপরিচালক কাউকে নিয়োগ না দিয়ে তিন সদস্যের কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। শুরার জেষ্ঠ্য সদস্য বা হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কমিটিতে না রেখে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আপাতত বিরোধ এড়ানো গেছে। আগামী ছয় মাস কমিটির হাতে দেশের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালে রাজপথে নেমে আলোচনায় আসে আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজত। আহমদ শফী কওমি ঘরনায় 'বড় হুজুর' হিসেবে পরিচিত হলেও ১৩ দফা তাকে দেশব্যাপী পরিচিত এনে দেয়। আলোচিত এবং সামালোচিতও হন।

দাবি আদায়ে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে নেওয়া হেফাজত কর্মীদের হটিয়ে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আহমদ শফীকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও সহিংসতার মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরীসহ কয়েকজন হেফাজত নেতা জেলে যান।

আহমদ শফীর উত্তরাধিকার নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিরোধ চলছে। বাবুনগরীর পর তার সমর্থকদেরও মাদ্রাসা থেকে একে একে সরানো হয়। শতবর্ষী আহমদ শফীকে 'ভুল বুঝিয়ে' আনাস মাদানীর এসব করছেন বলে অভিযোগ তুলে গত বুধবার মাদ্রাসায় আন্দোলনে নামে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আনাস মাদানীর কক্ষ ভাঙচুর করে। পরের দিন মহাপরিচালকের দায়িত্ব ছাড়েন আহমদ শফী। এর ২০ ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়।

আহমদ শফী আমৃত্যু আল হাইয়াতুল উলালিল জামিয়াতুল কাওমিয়ার চেয়ারম্যান এবং বেফাকুল মাদ্রাসিল আরাবিয়ার (বেফাক) সভাপতি ছিলেন। হেফাজত আমির ছাড়াও তার মৃত্যুতে শূন্য এসব পদে কারা দায়িত্ব পাবেন তা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত