সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:০২

জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার প্রমাণ পায়নি মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটিও

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) কে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির প্রধান ও কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফাউজুল কবিন জানিয়েছেন, জুয়েল পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা করেননি। গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ’মসজিদের ঈমাম ও খাদেমের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি নিহত জুয়েল কোরআন অবমাননা করেননি। তার বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়ানো হয়েছিল।’

এর আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার প্রমাণ পায়নি জানিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে প্রতিবেদন দাখিল করে।  প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে বীভৎস ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে মসজিদের খাদেম, ডেকোরেটর মালিক ও ইউপি সদস্যকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি কোনোভাবেই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে

এদিকে রোববার সকাল থেকে কমিশনের তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্য নিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো ঘটনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে তদন্ত করছে কমিশন। সাক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ফলে ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে কাজ করছি। প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলেই পুরো ঘটনাটি আমাদের কাছে পরিস্কার হবে,’ বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, ঘটনাস্থলে বহিরাগতদের উপস্থিতি কীভাবে ঘটেছিল এবং তারা কোথা থেকে এসেছিল সেদিকটা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করছি, আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবো,’ বলেন তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত টিমের সঙ্গে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাহসিন কবির ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস সরকার।

প্রসঙ্গত, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাটগ্রামের বুড়িমারী বাজারে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত