সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:৩৭

হেফাজতের বিক্ষোভ রপ্তানি বাজারে প্রভাব ফেলবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘ফ্রান্সের দূতাবাস অভিমুখে হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থাকায় তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

বুধবার (৪ নভেম্বর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে কে একজন বলল ওরা বড় আন্দোলন করতেছে। অবশ্যই তারা অপিনিয়ন প্রকাশ করবে, সেই স্বাধীনতা আমরা সারাদেশে দিয়ে রেখেছি। অবশ্যই তারা মত প্রকাশ করবে। কিন্তু এমনভাবে করবে যাতে অন্যদের আঘাত করা না হয়। আমরা কেবল চাই যে এগুলোতে হিংসাত্মক কাজ করে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড যাতে না হয়।’

ফ্রান্সের একটি সাময়িকীতে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে।

বাংলাদেশে ইসলামী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবিও তুলেছে কোনো কোনো সংগঠন।

গত ২ নভেম্বর ‘সম্মিলিত ইসলামি দলগুলো’ ব্যানারে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নেতৃত্বে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হলেও পুলিশ তাদের পথে আটকে দেয়।

ফরাসি দূতাবাস বন্ধের দাবিতে বড় ওই বিক্ষোভের খবর ও ছবি প্রকাশ পায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তা দেখে ফরাসি রাজনীতিকদের মধ্য থেকে প্রতিক্রিয়া আসার খবরও গণমাধ্যমে আসে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসব বিক্ষোভ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে প্রভাব ফেলবে না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এদেশে সবার অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ আছে। লোকেরা তাদের অভিব্যক্তি, সেন্টিমেন্টটা প্রকাশ করছে। এবং তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে করেছে, হিংসাত্মক কাজ করে নাই। ঘর-বাড়ি ভাঙে নাই, অন্য লোক রে মারে নাই। এটা গুড নিউজ।’

‘আপনার ইউরোপে যদি দেখে, তাহলে অসুবিধা কী? কোনো অসুবিধা নাই। মানুষ তো তার সেন্টিমেন্ট প্রকাশ করতেই পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে তো আমরা কোনো উস্কানি দিচ্ছি না। সরকার এ ব্যাপারে বলেছে, আমরা কোনো মৃত্যু চাই না। কোনো লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। সে সাথে আমরা এটাও বলেছি, স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাদের রিস্ট্রেইন থাকা উচিত।’

মোমেন আরও বলেন, ‘কোনো হত্যাই আমরা পছন্দ করি না। কোনোভাবে আমাদের ধর্মও এই হত্যা পছন্দ করে না। আমরা বলেছি যে, আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তবে স্বাধীনতার সাথে সবসময় একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আপনি কোনো সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা চলার সময় বলতে পারবেন না যে বোমা বোমা। তাহলে কিন্তু আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। আপনি কোনো মার্কেট বা মলে গিয়ে আমার ফ্রিডম অব চয়েস বলে গুলি করে মারতে পারেন না। অন্যের স্বাধীনতা আপনি বিঘ্নিত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার সমূহকে আরও সজাগ হওয়া দরকার।’

সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নীতি হলো, কারও যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্পর্শকাতরতা আছে, স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে আমরা অন্যকে আঘাত করতে চাই না। এসব ব্যাপারে আমরা খুব সাবধান। আমরা চাই, অন্য কাউকে আঘাত করবে না। কারণ প্রত্যেকেরই একটা স্পর্শকাতরতা আছে। আমরা এ দুর্ঘটনার পরে ফ্রান্স সরকারকে জানিয়েছি, আমরা চাই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের নীতি। আমরা বলেছি পৃথিবীতে টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শান্তি।’

হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের পর ফ্রান্সে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান মোমেন।

চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, তাদের দেশে যারা মারা গেছে সেজন্য আমরা দুঃখিত। আমরা চাই না কোনো লোক খামোখা মারা যাক।

‘আমরা বলেছি যে, আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তবে প্রত্যেকেরই স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে সতর্ক হওয়া উচিত। উস্কানিমূলক কিছু করা ঠিক হবে না।’

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত