সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ মার্চ, ২০২১ ১০:৫৬

তারল্য সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ জরুরি: প্রধানমন্ত্রী

করোনার পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে তারল্য সংকটের দ্রুত সমাধানে বৈশ্বিক পদক্ষেপ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ও কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তারল্য সংকট মোকাবিলা ও ঋণের বোঝা লাঘবে আমাদের উচ্চাভিলাষী ও সমন্বিত বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।’

সোমবার (২৯ মার্চ) ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেটআর্কিটেকচার অ্যান্ড লিকুইডিটি’ বিষয়ক ‘ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য এরা অব কোভিড-১৯ অ্যান্ড বিয়ন্ড ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে দেওয়া ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তারল্য সরবরাহ ও ঋণ সমস্যা সমাধানে আরও সাহসী ও সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই উচ্চ-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠক আয়োজন করা হয়।

কোভিড-১৯-জনিত মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে বিশ্বকে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ নিশ্চিত করতে জরুরি ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বনেতাদের এই বৈঠকের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

২০২০ সালে ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য এরা অব কোভিড-১৯ অ্যান্ড বিয়ন্ড ইনিশিয়েটিভের (এফএফডিআই) পৃষ্ঠপোষকতায় মহামারি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে অনুষ্ঠিত কয়েকটি বৈঠকের পর এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো।

বৈঠকের জন্য পাঠানো ভিডিওবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘জি৭, জি২০ ও ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে আমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশ, এমডিবিএস (মাল্টিলেটারেল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকস) ও আইএফআইএসের (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন) উচিত বড় পরিসরে ও নতুন ‘স্পেশাল ড্রইং রাইটসে’র মতো বরাদ্দের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো।

উপযুক্ত সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক ঋণ কাঠামো সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে তাদের ০.৭ শতাংশ ও’ডে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির জন্য তাদের রাজস্ব প্রণোদনা, অর্থনীতিতে বিশেষ সুবিধা ও ঋণ রেয়াত বাড়াতে হবে। এসডিজিএস’র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এলডিসিএস (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজ) উত্তরণের জন্য অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন আন্তর্জাতিক সহায়তা পদক্ষেপ নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলাকালে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেওয়ার পর একবছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। বিশ্ব এখনো করোনার কারণে যে আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে আনুমানিক প্রায় ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর থেকে মহামারির বিরূপ প্রভাব কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই ১ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ শুরু করেছি, যা আমাদের জিডিপি’র প্রায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বিঘ্নে ব্যবসা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য ও ঋণযোগ্য তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট, ফরেন ট্রেড ও ফাইন্যান্স, রেমিটেন্স, বৈদেশিক ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সহনীয় করতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করেছি। সরকারের বিচক্ষণ ঋণ নীতির কারণে চলমান মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো ভালভাবে ঋণ পরিশোধেরতার ‘ঋণ খেলাপি না হওয়ার’ সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

খবর: বাসস।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত