নিউজ ডেস্ক

২১ নভেম্বর, ২০১৫ ১৩:০৫

কারাফটকে নিরাপত্তা জোরদার

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা শনিবার সকালে আরও বাড়ানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আপেক্ষায় রয়েছে।

সাবেক দুই মন্ত্রীর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তিতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে ঢুকেছেন বলেও কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের এই কারাগারেই রয়েছেন যুদ্ধাপরাধী সাবেক দুই মন্ত্রী। বুধবার তাদের রিভিউ আবেদন খারিজের পর থেকে সেখানে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর পাহারা বসে।

শুক্রবার নিরাপত্তা জোরদারের পর শনিবার সকাল থেকে আরও কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে কারাফটক এবং সংলগ্ন এলাকায়।

কারাগারের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে চক বাজার থেকে কারাফটকের সামনে দিয়ে যাওয়ার সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারাফটকের কাছে সংবাদ মাধ্যমের কোনো গাড়িও রাখতে দেওয়া হচ্ছে না।

হেঁটে ঢুকতে চাইলেও তল্লাশি হচ্ছে। পরিচয় যাচাইয়ের পর শুধু গণমাধ্যমকর্মী এবং কারাগারে বিভিন্ন বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

কারাফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন ডজন খানেক র‌্যাব সদস্য। আশপাশে এই বাহিনীর অর্ধশত সদস্য টহলে রয়েছেন।

পুলিশ বাহিনী একটি সাঁজোয়া যান নিয়ে তৈরি আছে। প্রায় একশ পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন দেখা যাচ্ছে, এছাড়া সাদা পোশাকেও রয়েছেন অন্যান্য বাহিনীর সদস্য। 

গত দুদিনের চেয়ে শনিবার নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সঞ্জীত কুমার রায় বলেন, “যেহেতু দুজন ফাঁসির আসামি রয়েছেন। তাই বাইরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই পদক্ষেপ।”

নিরাপত্তা জোরদারের মধ্যেই সকাল সোয়া ১০টার দিকে কারাগারের মূল ফটক দিয়ে দুজন বেসামিরক কর্মকর্তাকে ঢুকতে দেখা যায়। কর্তব্যরত কারাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ম্যাজিস্ট্রেট।

গত বুধবার আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর রায় বৃহস্পতিবার কারাগারে পৌঁছে যাওয়ার পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। 

তাদের সামনে শুধু সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার। শুক্রবার দিনভর আলোচনা চললেও তারা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে সেই আবেদন করবেন কি না, তার উত্তর মেলেনি।

কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই যুদ্ধাপরাধী দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তা শোনা হবে।

সেই কারণে ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেটের কারাগারে প্রবেশের এটাই কারণ; যদিও এই বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।    

শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শুনিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। রাত পর্যন্ত এর কোনো জবাব তার কাছে পৌঁছায়নি।

এর আগে যুদ্ধাপরাধে যে দুজন আব্দুল কাদের মোল্লা এবং মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড এই কারাগারেই কার্যকর হয়েছিল, তারা প্রাণভিক্ষা চাননি। 

আইনি সব প্রক্রিয়া নিষ্পত্তির পর সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কখন কার্যকর হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।

শুক্রবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করেই কারাগারের ফটকে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ কয়েকজন আত্মীয়।

কারাগারে ঢোকার সুযোগ না পেয়ে ফটকের বাইরে তারা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাণভিক্ষার বিষয়ে এই বিএনপি নেতার মত জানতে এসেছেন তারা।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলে চলতি বছরের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে।

একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদেরের রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় এ বছর ২৯ জুলাই আপিলের রায়েও বহাল থাকে।

তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং কারা কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর তা দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনায়।

এরপর দুই যুদ্ধাপরাধী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বুধবার আদালত তা খারিজ করে দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত