সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২৩:১১

এক জোড়া চিত্রা হরিণ কেনা যাবে এক লাখ টাকায়

রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ময়ূর ও চিত্রা হরিণ বিক্রির অনুমোদন আছে। আগে একেকটি হরিণের দাম ছিল ৭০ হাজার টাকা। তবে এখন প্রতিটি চিত্রা হরিণ ৫০ হাজার টাকায় কেনা যাবে। মানবিক কারণে একাকীত্ব দূর করতে চিড়িয়াখানা থেকে মূলত একটি পুরুষ হরিণ ও একটি স্ত্রী হরিণ একসঙ্গে বিক্রি করা হয়। সে হিসাবে এখন ১ লাখ টাকায় পাওয়া যাবে এক জোড়া চিত্রা হরিণ।

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (প্রাণিসম্পদ-২) এক প্রজ্ঞাপনে হরিণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় চিড়িয়াখানার উদ্বৃত্ত প্রতিটি চিত্রা হরিণের বিক্রয়মূল্য ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণে সম্মতি প্রদান করা হলো। আর এক জোড়া ময়ূর বিক্রি হবে ৫০ হাজার টাকায়।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক আবদুল লতিফ বলেন, আজ সোমবার থেকে ৫০ হাজার টাকায় চিত্রা হরিণ বিক্রি কার্যকর হয়েছে। দেশে বেসরকারিভাবে হরিণের বেশ কিছু খামার গড়ে উঠেছে। সেসব খামার থেকে হরিণ কম মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। ফলে যারা হরিণ কিনতে চান, তাদের কাছ থেকে অভিযোগ ছিল সরকারিভাবে হরিণ কিনতে বেশি দাম দিতে হচ্ছে। তাই প্রায় দেড় মাস আগে তিনি হরিণের দাম কমানোর জন্য সুপারিশ করেছিলেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে অবশেষে এ সুপারিশ অনুমোদন পেয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত একেকটি ৭০ হাজার টাকা দামে ২৮ জোড়া হরিণ বিক্রি করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আবদুল লতিফ জানালেন, করোনায় দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ছিল। দর্শনার্থী না থাকায় এখানকার জীবজন্তুদের প্রজনন বা বংশবিস্তার বেড়েছে। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৩৩০টি চিত্রা হরিণ আছে। অথচ জায়গা আছে মাত্র ১৭০টির। মায়া হরিণ অল্প পরিমাণে আছে। পরিমাণে কম ও মায়া হরিণের বংশবিস্তার কম হয় বলে এটি বিক্রি করা হয় না।

হরিণের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। সৌন্দর্য বা শখের জন্য মূলত মানুষ হরিণ কেনেন। খাদ্য হিসেবে হরিণের পছন্দ সুন্দরবনের কেওড়াগাছের পাতা। চিড়িয়াখানার পরিচালকের উদ্যোগে ২০০ কেওড়া গাছ লাগানো হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় হরিণেরা কলমি শাক ও নেপিয়ার ঘাস খায়।

আবদুল লতিফ বললেন, হরিণ কিনতে হলে বন বিভাগের অনুমোদন লাগে। অনেকে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে হরিণ কিনবে বলে অনুমোদন নিলেও পরে অন্য খামার থেকে কম দামে হরিণ কিনছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। হরিণের দাম কমানোর পেছনে এটিও একটি কারণ। আর মানুষকে হরিণ কিনতে আকৃষ্ট করতে চাইলে দাম কমানোর কোনো বিকল্প নেই। চিড়িয়াখানায় হরিণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য এত হরিণ রাখারও কোনো দরকার নেই।

কেউ হরিণ কিনে যাতে তা জবাই করতে না পারে, তার জন্য আবদুল লতিফ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছেন। তিনি জানালেন, হরিণ বিক্রির পর তার কাগজপত্রের কপি জেলা ও উপজেলা অফিস এবং সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। কোনো কারণে হরিণের মৃত্যু হলে এর ডাক্তারি সনদ দেখাতে হয় ক্রেতাকে। হরিণ অসুস্থ হলে বা অন্য কোনো সমস্যায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বা জেলা-উপজেলার সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।

হরিণ ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আড়াই বছর বয়সের পর থেকে বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। হরিণ বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। বেশির ভাগ সময় একটি বাচ্চার জন্ম দিলেও তিনটি পর্যন্তও বাচ্চার জন্ম দেয়। ছাগল লালন–পালনের মতোই হরিণ লালন–পালন করতে হয়।

চিড়িয়াখানায় বর্তমানে এক জোড়া ময়ূর বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার টাকায়। গত জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ময়ূর বিক্রি হয়েছে বলে জানান আবদুল লতিফ।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত