সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ২১:৫৮

জাতিসংঘকে বাংলাদেশের কড়া জবাব

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ এবং অপরাধীদের ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিবাদ জানিয়েছিল জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার এই প্রতিক্রিয়ার কড়া জবাব দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের এমন বিবৃতি ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’।

গত মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর না করার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে।

এর জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা খুব দুঃখের ব্যাপার যে নির্দিষ্ট কিছু পক্ষ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পক্ষপাতমূলক এবং ভিত্তিহীন মন্তব্য করছে। অথচ এই বিচারকে বাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাধুবাদ জানিয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সব ধরনের অভিযোগ নাকচ করে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ে (ওএইচসিএইচআর) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাস্তবতা সম্পর্কে ‘ভুল ধারণা বা ভুল উপলব্ধি’ থেকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ওএইচসিএইচআর যে সিদ্ধান্ত টেনেছে তাতে বাংলাদেশ সরকার ‘ক্ষুব্ধ’ হয়েছে।

চিঠিতে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া, রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল এবং তারপরে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

একাত্তরে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনালে শুধু তাদের বিচার হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসি রায় হয়েছে তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলেই। এখানে তাদের রাজনৈতিক পরিচায় বিবেচ্য ছিল না। বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট নিছকই কাকতালীয় ব্যাপার।

“এসব মামলার ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা সম্পৃক্ততার বিষয় নেই এবং তারা যে কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য তা ওই অপরাধের বিচার শুরু হওয়ায় ঘটনা সংশ্লিষ্টতার কারণে হয়েছে।”

এছাড়া যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত বা ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত কয়েকজন ক্ষমতাসীন দল বা তাদের জোট শরিক দলের সদস্য বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।

আইসিসিপিআর'র ১৪ নম্বর ধারায় অভিযুক্তদের জন্য সংরক্ষিত অধিকারের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ১৯৭৩ সালের আইসিটি আইনের কোনো ধারা সাংঘর্ষিক নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

আইসিটি আইন-১৯৭৩ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত বলে জানানো হয়।

আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কেবল দোষী ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু বছরের বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও এতে বলা হয়েছে।

২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে গৃহীত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবেও বিষয়টি উঠে এসেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, এটি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ যে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এখনও অভিযুক্ত ও দোষীদের কথা আওড়িয়ে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে ‘পক্ষপাতমূলক ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করে যাচ্ছে।

বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এমন বিবৃতি দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তর যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাদের পক্ষ নিয়েছে কি না সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে চিঠিতে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত