সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ অক্টোবর, ২০২১ ০১:৩৬

চিরনিদ্রায় শায়িত ‘গরিবের আইনজীবী’ বাসেত মজুমদার

‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে পরিচিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারকে শোক, ভালোবাসা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

আবদুল বাসেত মজুমদার মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। নিউমোনিয়া দেখা দিলে গত শুক্রবার তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এর মধ্যে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ওই দিন থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

এদিকে, আবদুল বাসেত মজুমদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকাজ চলেনি। অপর দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতাদের আবেদনে ঢাকায় অধস্তন আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বনানী সোসাইটি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা দুইটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখান থেকে বাসেত মজুমদারের মরদেহ কুমিল্লার লাকসামের শানিচো গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে বরেণ্য এই আইনজীবীকে দাফন করা হয়।

১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লালমাই (সে সময় ছিল লাকসামের অধীনে) উপজেলার শানিচোঁ গ্রামে আবদুল আজিজ মজুমদার ও জোলেখা বিবির সংসারে বাসেত মজুমদার জন্ম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০১-০২ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার আগে ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বাসেত মজুমদার।

বাংলাদেশে আইনজীবীদের তদারককারী কর্তৃপক্ষ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদেও তিনি দুই মেয়াদে ছিলেন।

অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় আইনপেশায় নিয়োজিত বাসেত মজুমদার এক দিকে দুস্থ আইনজীবীদের জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড করেছিলেন, অন্যদিকে বহু মানুষকে বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দেওয়ায় পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে।

পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আইন পেশায় থাকা আবদুল বাসেত মজুমদার দুই মেয়াদে (১৯৮৬–১৯৮৭ ও ১৯৮৭–১৯৮৮) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ছিলেন। সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

বাসেত মজুমদার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। তারা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত