সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ নভেম্বর, ২০২২ ১৩:১২

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি মামলায় তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ব্যাংকটির অর্থপাচারের মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এ আদেশ দেয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, জামিন আবেদনকারী মোহাম্মদ আলীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএম আবুল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, তার সঙ্গে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।

রায়ের পরে আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন বলেন, ‘রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সব মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আমাদের জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে।’

এ ঘটনায় করা ৫৬টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলার আসামি মোহাম্মদ আলী। এর মধ্যে তিন মামলায় তিনি জামিন চেয়েছেন। পরে জামিন শুনানিতে গত ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় দুই হাজার ৭৭ কোটি ৩০ লাখ ২৯৯১ টাকা যা সুদসহ দুই হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করে।

এসব মামলায় ৮২ জন ঋণ গ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফকরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, জিএম এ. মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ ২৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা, প্রিন্সিপাল/প্রধান শাখা, দিলকুশা শাখা এবং শান্তিনগর শাখাসহ মোট চারটি শাখার ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গুলশান থানায় ২৩, মতিঝিল থানায় ১২ ও পল্টন থানায় ২১টিসহ মোট ৫৬টি মামলা করা হয়। মামলায় ২৭ বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা, ৮২ ব্যবসায়ী ও ১১ বেসরকারি সার্ভেয়ারসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন। তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো- আত্মসাৎ করা অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্তকরণ ও তাদের জবানবন্দি গ্রহণ (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সাক্ষীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ণিত মামলায় আলামত প্রচুর ও ব্যাংকের বিশাল পরিমাণ কাগজপত্র থেকে প্রকৃত সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য। এছাড়া প্রকৃত আসামি শনাক্তের প্রক্রিয়াটিও এ মামলায় বেশ জটিল। এছাড়া, মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি।

মামলাগুলোর আগের তদন্ত কর্মকর্তারা বদলির কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্তকাজ এগিয়ে চলছে। আসামি ও আলামত শনাক্ত করা, সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ ও এমএলএআর’র পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে মামলার প্রয়োজনীয় আলামত পাওয়া সাপেক্ষে। একইসঙ্গে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

৫৬টি মামলায় আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত