সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:০৮

সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা বিএনপির ৭ এমপির

বিএনপির সাতজন এমপি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার ঢাকায় বিভাগীয় বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা দেন তারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে এই পথে যাচ্ছেন দলটির সংসদ সদস্যরা।

 বিএনপির সাত এমপি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৬ আসনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে রুমিন ফারহানা।

বগুড়া-৫ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) দলের সাতজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো।’

জিএম সিরাজের পর বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের দলীয় এমপিরা সবাই সংসদ থেকে পদত্যাগ করছেন। সবাই ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগামীকাল হাতে হাতে দেওয়া হবে।’

এর আগে শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। আর প্রধান অতিথি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সমাবেশটি সঞ্চালনা করছেন ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।

সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে বিএনপির সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। তারা এসব হয়রানির অবসান চান।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বুধবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার হয়ে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস কারাগারে আছেন।

ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা আর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

কিন্তু মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের হাইকমান্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণসমাবেশে বিএনপির দশ দফা আর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিকে গোলাপবাগের সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ আরও অনেকে উপস্থিত আছেন।

সমাবেশ শুরুর আগেই শনিবার ভোর থেকে গোলাপবাগ মাঠ বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে-স্লোগানে মুখর। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ঢল গোলাপবাগ মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কও ছাপিয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের নানা রঙের টি-শার্ট-ক্যাপ পরে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে।

বিএনপি ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। তবে সেখানে অনুমতি পায়নি দলটি। পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি শুরু থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে না বলে জানিয়ে আসছিল।

নানা নাটকীয়তার পরে শুক্রবার ২৬ শর্তে গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করার অনুমতি পায় বিএনপি। ওই দিন বিকাল থেকেই দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীরা এই মাঠে আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামতেই পূর্ণ হয়ে ওঠে এই মাঠটি।

দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে সমাবেশে আসা একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে নানা চড়াই-উতরাই পার করে তারা ঢাকায় এসেছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আসা সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, `আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সকাল থেকেই সমাবেশস্থলের পাশে মানিকনগর এলাকায় অবস্থান নিয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, ‘এই স্বৈরাচার সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলন থামবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।’

ভোলার মনপুরা থেকে আসা আব্দুল মান্নান চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের ডাকে আমরা পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। আমরা এই সরকারের পতন চাই। দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।’

কমলাপুর সড়কে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ করেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন আহমেদ পিন্স। তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার গত ১৪টি বছর মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছন। এই সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।’

প্রসঙ্গত, দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ দিয়ে এই কর্মসূচির ইতি টানবে দলটি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত