সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ১২:৪১

কাশিমপুরে যেমন আছেন ‘বাইডেনের উপদেষ্টা’ আরাফি

ইশরাক হোসেনসহ বিএনপি নেতাদের নিয়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিঞা আরাফি

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে বিএনপি কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করা মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফি ওরফে মিঞা আরাফি গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি।

দিনে অন্তত ১৫ বার জো বাইডেনের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদানের দাবি করা আরাফির খোঁজ নেয় না কেউ। তার পরিবারপরিজন, বিএনপির কেউ তার খোঁজ নেয়নি। গ্রেপ্তারের ২৫ দিনে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ একবার মাত্র তার খোঁজ নেওয়া হয়েছিল।

কারাগার সূত্র জানা যায়, কারাগারে সাধারণ বন্দি ক্যাটাগরিতে রয়েছেন মিঞা আরাফি। কারা কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা খাবার তাকে খেতে হচ্ছে। কারা সেলে সারা দিন পায়চারি করে আর টেলিভিশন দেখে তার সময় কাটে। দিনের বেশিরভাগ সময়ে বিষণ্ন থাকেন। কারও সঙ্গে খুব একটা কথাও বলেন না।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের পর হাই সিকিউরিটি কারাগারেই বন্দি রয়েছেন মিঞা আরাফি। ওই কারাগারে নেওয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে একবার তাকে কারাগারে দেখতে যাওয়া হয়। এ ছাড়া তার কোনো স্বজন এ পর্যন্ত তাকে দেখতেও যাননি। মিঞা আরাফি কারা কর্মকর্তাদের বলেছেন, ঢাকায় তার এক স্ত্রী থাকেন। কিন্তু তিনিও তার সঙ্গে দেখা করতে যাননি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, শুরুর দিকে কারাগারের খাবার খেতে মিঞা আরাফির কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। এখন মানিয়ে গেছেন। তিনি চাইলে নিয়ম অনুযায়ী নিজের টাকায় কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনেও খেতে পারেন।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, মিঞা আরাফির সঙ্গে দেখা করতে তার কোনো স্বজন কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারা শুনেছেন, ওই বন্দির স্ত্রী ঢাকাতেই থাকেন, তিনিও যোগাযোগ করেননি। নিয়ম মেনে কেউ তার দেখা করতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ তা করবে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক মিঞা আরাফির প্রকৃত নাম মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরাফি। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতায় আগেই শেষ হওয়ার পর তিনি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়ে হাজির হন। এরপর বিএনপির কয়েক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আর আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দলের ন্যাশনাল কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেও শোনা যায়। পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তখন তিনি দাবি করেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ পক্ষে।’ মিঞা আরাফি বাইডেন ছাড়াও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ‘প্রতিনিয়ত যোগাযোগের’ বিষয়েও কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ‘মার্কিন সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিরোধীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে।’ অবশ্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ওই দিনই জানানো হয় যে, দূতাবাসের কোনো ব্যক্তির বিএনপির কার্যালয়ে যাওয়ার বিষয়ে যে গুজব তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল। ওই ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কথা বলেন না। তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি।

এদিকে উসকানিমূলক ও রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মিঞা আরাফি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা করেন এক ব্যক্তি। ওই মামলায় ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিমান বন্দর থেকে মিঞা আরাফিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে মামলার আসামি হাসান সারওয়ার্দীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত