২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০২:৪৬
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ও সংঘর্ষের পর শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক রহস্যময় ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’ দাবি করা ওই ব্যক্তিকে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের পাশে বসে বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে একটি ভিডিওতে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাপি রঙের শার্ট পরিহিত ওই ব্যক্তি ইংরেজিতে কথা বলছেন।
শনিবার সন্ধ্যার পর কয়েকটি গণমাধ্যম ওই ভিডিও নিয়ে খবর প্রকাশ করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
তবে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কথা বলেন না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওখানে গিয়েছেন।’
রহস্যময় ওই ব্যক্তিকে নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে বিএনপি নেতা ইশরাক সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন না। সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয়ে সাংবাদিকদের সামনে এক ব্যক্তির বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির মহাসচিবের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বিএনপি একেবারেই অবগত নয়।
পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতা–কর্মীদের খোঁজখবর নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালায়ে এলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী দুইজন ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে আসেন এবং আহত নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। সাবেক এই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ও তার সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা আহত বিএনপি নেতা–কর্মীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা মিডিয়ার সঙ্গে তারা কথা বলতে চান। একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বা চার তারকার অধিকারী সাবেক জেনারেলের সম্মানেই তাদের পাশে বসেন ইশরাক।
ইশরাক হোসেন বলেন, কথা বলার আগে পর্যন্ত তার পরিচয় অর্থাৎ নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাদের পাশে বসা ছাড়া তার প্রত্যক্ষ কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
এই ব্যক্তির আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কারো জানার আগ্রহ থাকলে নিজ উদ্যোগে খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শ দেন ইশরাক।
এদিকে, দুই দফা গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় কথিত মিয়ান আরাফি বিএনপির সমাবেশে পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার যা হয়েছে তার আগাগোড়া আমেরিকা জানে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ‘জো বাইডেনের উপদেষ্টা’ দাবি করা ওই ব্যক্তি আরও হুঁশিয়ার দেন, বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করার পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হবে। এছাড়াও তিনি দেশের রাজনীতি ও সরকার নিয়েও নেতিবাচক কথা বলেন।
তবে বিএনপি বলছে, ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর কিছুই জানেন না। তার কোনো বক্তব্যের দায় বিএনপি নেবে না।
মিয়ান আরাফি নামের ওই ব্যক্তির দাবি, বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় শিগগির কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ৩ নভেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ান আরাফি নামে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশ নেই। মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, মার্কিন দূতাবাসের কোনো তৎপরতার বিষয়টি গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল।
আপনার মন্তব্য