
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:২৫
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠেছে। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। চাকরি না পেয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা প্রতিমন্ত্রীর ডাকে তার সরকারি বাসভবনে গেলে তারা মারধরের শিকার হন। তবে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এ এনিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ঘুষের অভিযোগকে অস্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ ডিসম্বের) রমনা থানায় দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, থানায় অভিযোগটি করেছেন মন্ত্রীর অফিস সহায়ক মো. মমিন।
তার দাবি, ‘সকাল ১১ ঘটিকায় আসামি মো. আবু সুফিয়ান বিশ্বাস সহ অজ্ঞাত ৩ জন ব্যক্তি প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সরকারি বাসভবনের গেটে জোরে ধাক্কা দিলে মো. রাসেল পকেট গেইট খুলে পরিচয় জানতে চাওয়ার সাথে সাথেই জোরপূর্বক তাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। রাসেল প্রতিবাদ করলে আবু সুফিয়ান তার ইউনিফর্মের কলার ধরে কিল ঘুসি দেওয়া শুরু করে এবং অজ্ঞাতরা তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আসামি আবু সুফিয়ান তাকে বলে তোর মন্ত্রিকে খবর দে আমাকে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে।
আসামিরা নিরাপত্তা কর্মীর সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ ভীতি প্রদর্শন করে। তাদের হামলা অবস্থায় মো. রাসেল এর ডাক চিৎকারে উল্লেখিত সাক্ষীগণ বাসভবনের ভিতর থেকে ছুটে গেলে অজ্ঞাত আসামিরা পালিয়ে যায় এবং স্বাক্ষীদের সহায়তায় ধাওয়া দিলে আবু সুফিয়ান ডি.বি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ভিতর ঢুকে পড়লে, ডি.বি নিরাপত্তা পুলিশের সহায়তায় আটক করা হয়। আবু সুফিয়ান বর্তমানে ডি.বি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে আটক রয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনার পর আমাদের খরব দেয়া হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অভিযোগটি এখন তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
চাকরির কথা বলে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ
চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের পক্ষ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ একাধিক চাকরিপ্রার্থীর। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সুপারিশ করতে যান ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’-এর আবু সুফিয়ান বিশ্বাসসহ কয়েকজন। আবু সুফিয়ান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা জেলার সভাপতি।
২০২২ সালের ৮ জুন মাসে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাসায় ওই মিটিং হয়।
আবু সুফিয়ান জানান, ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ৪৮ জনকে নিয়োগের জন্য ৬ কোটি টাকায় রফা হয়। মন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও ড্রাইভার মোমিনকে টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। তখন অগ্রিম হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে লিটন ও মোমিনের কাছে ৪৮ জন চাকরি প্রার্থীর জন্য ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন আবু সুফিয়ান ও নাছির হাওলাদার নামের এক চাকরি প্রার্থী। তবে ওই ৪৮ জনের কেউই চাকরি পাননি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় ১১ জুন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন আবু সুফিয়ানসহ অন্যরা। এ সময় মন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগীরা। ফলে গত ১৪ মে ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন
মো. জাকির হোসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি ঘোষিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাকির হোসেন।
ক্ষুব্ধ প্রতিমন্ত্রীর ডাকেন অভিযোগকারীদের
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়ার পর এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ক্ষুব্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ওপর। বৃহস্পতিবার তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার কথা বলে মন্ত্রীর বাসায় ডাকেন ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল। কল্লোলের কথা মতো সকাল ১১টায় মন্ত্রীর মিন্টো রোডেরে ১১ নম্বর বাসায় যান আবু সুফিয়ান, নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান নামের তিনজন।
ওই তিনজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের রুমে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওপর থেকে ওই রুমে চলে আসেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী তার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তায় থাকা ৭ থেকে ৮ জন ওই রুমে প্রবেশ করে। এ সময় রুমের দরজা আটকে দিয়ে তিনজনকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মন্ত্রী নিজেও রড দিয়ে পেটাতে থাকেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছোটাছুটি করে রুমের দরজা খুলে ফেলেন ভুক্তভোগীরা। তিনজন থেকে নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আবু সুফিয়ান পার্শ্ববর্তীর দেওয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন। পরে ডিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তায় থাকা সদস্যরা তাকে আটক করে বলে জানিয়েছেন জাহিদ হাসান। মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর জাহিদ হাসান ও নাসির হাওলাদার গণমাধ্যমকে ঘটনার বিবরণ দেন।
মন্ত্রণালয়ের অস্বীকার
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার ঘটনাকে ‘উদ্ভট, অলীক ও কল্পনাপ্রসূত’ বলে দাবি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনের পাঠানো প্রতিবাদপত্রে দাবি করা হয়, মরধরের খবর উদ্ভট, অলীক ও কল্পনাপ্রসূত। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম পর্বের পরীক্ষা হওয়ায় ভিড় ও তদবির এড়াতে প্রতিমন্ত্রীর মিন্টো রোডের বাসায় অপরিচিত কাউকে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়। তারপরও গতকাল কতিপয় ব্যক্তি প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে হাউসগার্ড বাধা দেয়। কিন্তু তারা বাধা অগ্রাহ্য করে বাসার ভেতর প্রবেশ করে এবং গার্ডদের সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ধস্তাধস্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর সময়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকসহ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আপনার মন্তব্য