নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ২৩:২৬

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল আগর-আতর

প্রতীকি ছবি

মৌলভীবাজারের আগর এবং আগর-আতরসহ চারটি পণ্যকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়ে জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮টি। চারটি পণ্যের অন্য দুটি হলো রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম ও মুক্তাগাছার মন্ডা।

আগর-আতরের আঁতুড়ঘর হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। এলাকায় আগর চাষের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের। ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে আবুল ফজল রচিত ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে আগর কাঠ, আগর তেল এবং আগর থেকে আতর আহরণের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বড়লেখায় আগর চাষের বিস্তার ও ব্যবসা সুসংগঠিত হয়। এ কারণে মৌলভীবাজারকে আগর-আতরের জেলা বলা হয়। বড়লেখা ছাড়াও জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে আগরের চাষ হচ্ছে। ২০১৫ সালে শিল্প হিসেবে ঘোষণার পর বাণিজ্যিকভাবে আগরের চাষ বেড়েছে এ অঞ্চলে। আগর-আতর শিল্পের সঙ্গে মৌলভীবাজারের ৪০-৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে। বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে প্রায় আড়াইশ ছোট ও মাঝারি আগর-আতর কারখানা গড়ে উঠেছে। আগর থেকে আতর সংগ্রহের পদ্ধতিটি বেশ প্রাচীন। আগরগাছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ক্ষতে কষ জমা হয়। গাছ কেটে ক্ষতস্থান বেছে নিয়ে ডেকচিতে জ্বাল দিয়ে উৎপাদন করা হয় আতর আর কাঠগুলো সুগন্ধি আগর।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার উৎপাদিত কাঁচা আতর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয়। চাহিদা ভালো থাকায় প্রচুর পরিমাণে আগর কাঠও রফতানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব কাঠ ধূপের মতো জ্বালিয়ে সুগন্ধি তৈরি করে। বর্তমানে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রফতানি হচ্ছে। কুয়েত, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বাংলাদেশীদের কয়েকটি আগর-আতর কারখানা আছে।

২০০৩ সালে বাংলাদেশে এ কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে একে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নামে অভিহিত করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ পাস হয়। এর দুই বছর পর ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়।

২০১৬ সালে জামদানি শাড়িকে বাংলাদেশে প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর স্বীকৃতি পায় আরও ২০টি পণ্য। সেগুলো হলো বাংলাদেশ ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারীভোগ, বাংলাদেশের কালিজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, বাংলাদেশের শীতল পাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।

সম্প্রতি অনুমোদিত তিনটি পণ্য টাঙ্গাইল শাড়ি, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা ও গোপালগঞ্জের রসগোল্লার অনুমোদনের কপি ও জার্নাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। এতে জিআই পণ্যের সংখ্যা হয় ২৪টি। সোমবার চারটি জিআই পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হওয়ায় মোট অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮টি।

এ ছাড়া আরও দুটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো হলো জামালপুরের নকশি কাঁথা এবং যশোরের খেজুর গুঁড়। আগামী সপ্তাহে এই দুটি পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এরআগে সিলেট অঞ্চলের শীতল পাটি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে শীতল পাটি বুননের ঐতিহ্যগত হস্তশিল্পকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত