রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর

২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১৬:২৯

স্কুল ছেড়ে দোলন এখন আইসক্রিম বিক্রেতা

‘ক্লাস ফাইভে পাস কইরা সিক্সে উইঠা ইশকুল ছাইড়া দিছি, অহন পেডের দায়ে আইসক্রিম বিক্রি করি। বাপে বই খাতা কিনইয়া দিতে পারে না। তাই ইশকুল ছাইড়া আইসক্রিম বিক্রি করতে নাইম্মা (নেমে) পড়ছি।’ এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন আইসক্রিম বিক্রেতা মো. দোলন আহমদ।

তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মুরাদাবাদ গ্রামের ছেলে। তার বাবা মৃত আহমদ আলী একজন আইসক্রিম বিক্রেতা ছিলেন। উপজেলার স্থানীয় সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও অভাবের তাড়নায় পড়াশোনার ইতি ঘটে দোলনের।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে আইসক্রিম বিক্রেতা দোলনের সাথে দেখা হয় সৈয়দপুর গ্রামে। পথিমধ্যে তৃষ্ণার্ত পথিকের কাছে আইসক্রিম বিক্রি করছিল সে। তার সাথে কথা হলে সে জানায়, পঞ্চম শ্রেণি পাস করে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। তার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে পারছিল না দরিদ্র বাবা মৃত আহমদ আলী। তার ছোট তিনবোন মিলি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মা সয়ফুল বেগম গৃহিণী। যখন সংসারের খরচাপাতি চালাতে পারছিলেন না, তখন একদিন বাবা ডেকে তাকে বলে- ‘হৃদয় তোর আর ইশকুলে যাওয়ার দরকার নেই, কাইল থেকেই আইসক্রিম বিক্রি করতে বের হয়ে যাবি’।

দোলন আহমদ আরও বলে, লেখাপড়া করে অনেক বড় চাকরি করে বাবার সংসারের হাল ধরাটা তার স্বপ্ন হলেও, সে এই কথাটা ওই দিন তার বাবাকে বলতে পারেনি। ফলে পরের দিনই আইসক্রিমের বাক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় টাকা উপার্জনের উদ্দেশে।
সেই থেকেই আইসক্রিমের বাক্স করে আইসক্রিম বিক্রি করে সংসারে অবদান রাখছে সে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে, স্কুল-কলেজ ও হাট-বাজারে আইসক্রিম বিক্রি করে দোলন। সারাদিন আইসক্রিম বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন হয় তার। সেখান থেকে আইসক্রিম বাবদ মালিককে ২৫০ টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা তার আম্মার হাতে তুলে দেয় সে। দোলনের অভিযোগ- আইসক্রিম নিয়ে অনেকেই তাকে আর টাকা দিতে চায় না।

এই বয়সেই নিজের জীবন সংসারের ভার কাঁধে নেওয়া দোলনের সামনে কি কোন আলো আছে? দোলন বলে, আমারও ইচ্ছে করে পড়ালেখা কইরা বড় হইমু। এত কষ্ট করতে কি আর ভালো লাগে কন! সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা কি পারে না ওর মত মেধাবী ছাত্রের পাশে দাড়াতে?

মুরাদাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাওলানা এহিয়া বলেন, দোলন আহমদ মেধাবী ছাত্র ছিল। অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারে না।

সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সৈয়দা শামসুর নাহার বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষক মৃত আহমদ আলী ছেলে দোলন। বাবা মৃত। আগে ক্লাস ফাইভে পাস করে সিক্সে উঠে অভাবে লেখাপড়া শেষ। এখন আইসক্রিম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। প্রথম স্থান অর্জন করা দরিদ্র পরিবারের সন্তান দোলনের সাহায্যার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সর্বস্তরের লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আবেদন জানায়।

জগন্নাথপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আমি এখন জেনেছি সে মেধাবী ছাত্র ছিল। তার পরিবারের খোঁজখবর নেব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত