সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ মার্চ, ২০২৪ ০১:৫৮

মোরগের ডাকে বিরক্ত সাবেক সচিব মিলন, থানায় জিডির হুমকি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত নাম সাবেক সচিব মাহবুব কবির মিলন রাজধানীতে থাকা তার প্রতিবেশির মোরগ পালনে আপত্তি জানিয়েছেন। মোরগ না সরালে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। হুমকিতে অবশ্য কাজ হয়েছে। প্রতিবেশি মোরগ সরিয়ে নিয়েছেন।

রাজধানীর আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে ঘটেছে এমন ঘটনা। মাহবুব কবির মিলন নিজেও স্বীকার করেছেন থানায় জিডির হুমকির বিষয়টি।

মাহবুব কবির মিলনের এক প্রতিবেশী গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ১৮ মার্চ এক ব্যক্তি আমার কাছে এসে বললেন, সচিব সাহেব (মাহবুব কবির মিলন) আপনার নম্বর চেয়েছেন। আমি নম্বর না দিয়ে তার কাছ থেকে সচিব সাহেবের নম্বর নিয়ে নিজেই ফোন দিই। তিনি ফোন রিসিভ করে বলেন, ছাদে কি মুরগির ফার্ম করেছেন? আমি বলি ফার্ম নয় ঠিক, পাখির খাঁচা বানিয়েছিলাম। সেখানে এখন পাখি নেই। বাচ্চারা গ্রামে গিয়েছিল সেখান থেকে পাঁচটা মুরগি এনেছে, তার মধ্যে একটা মোরগ। তিনি বললেন, মোরগ ডাকাডাকি করলে তো এলাকাটা গ্রাম আর খ্যাত হয়ে গেল!

আমি তাকে বলি, এই এলাকায় অনেকেই মোরগ-মুরগি পালে, আপনার বাসার সামনেও আছে। তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলব এসব সরাতে হবে, না হলে পুলিশের আশ্রয় নেব।

পুলিশের হুমকির পর মাহবুব কবিরের প্রতিবেশী উপায়ান্তর না পেয়ে মোরগটি জবাই করে ফেলেন। কিন্তু মুরগিগুলো রাখেন। এর দুদিন পর আবারও ওই বাসায় লোক পাঠান মো. মাহবুব কবির মিলন। বলেন মুরগি পালন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে!

একই ধরনের অভিযোগ করেন মাহবুব কবিরের আরেক প্রতিবেশীও। তিনি বলেন, সচিব সাহেব বাসায় সোসাইটির লোক পাঠান। তারা বলে গেছেন, ছাদে কোনো মোরগ-মুরগি পালা যাবে না। এগুলো সরাতে হবে।

প্রতিবেশীরা বলছেন, নিজের জায়গায় মুরগি পালতে সমস্যা কোথায়? কোথাও এরকম বিধিনিষেধ তো নেই। প্রধানমন্ত্রীও বাসাবাড়িতে ফাঁকা জায়গায় পশুপালন ও চাষাবাদে উৎসাহিত করেন। ঢাকা শহর বলে কি এর ব্যতিক্রম হবে?

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেছেন, শহরে বসবাস। বাড়ির উপর বাড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। আমার পাশের কয়েকটি বাসায় মোরগ এবং মুরগি পালে। মোরগের ডাকে সারা রাত ঘুমাতে পারি না। বিশেষ করে শেষ রাত থেকে দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। এই শব্দ দূষণে ফরজ নামাজের পর আর ঘুমানো যায় না।

তিনি বলেন, সাথের ৩/৪ টি বিল্ডিং এ নিশুতি রাতে একসাথে কয়েকটি মোরগ ডাকলে পরিবেশে শব্দ দুষণের কী ভয়াবহ রূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তাই সব বাসায় লোক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম মোরগ না পালার জন্য। মুরগি পালায় কোন সমস্যা নেই। যেহেতু মুরগি ডাকে না।

তিনি আরও বলেন, এক বাসায় আপত্তি জানালে, বলেছি তাহলে থানায় জিডি করা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবে না। কারণ এটা তো শহর, গ্রাম নয়। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। এরপর সব বাসায় মোরগ সরিয়ে ফেলেছে। এখন কোন সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, শখ করে যারা অন্যের কষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, এই সামান্য বোধটুকু যাদের নেই, তাদের বোধহয় হবার জন্য দোয়া করছি। শব্দ দুষণ রোধে আমি সারাজীবন কঠোর ছিলাম। এভাবেই প্রতিবাদ করা উচিত সবার।

এদিকে, বিভিন্ন মাধ্যমে মোরগের ডাক নিয়ে বিরক্তির খবর প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মাহবুব কবির মিলন। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি ফেসবুকে লেখেন, সাংবাদিকের পর সাংবাদিকের ফোন। আমি বললাম, আমার পোস্টে মোরগ নিয়ে লেখা আছে। তারপরেও আমাকে ফোন করা বা এই সামান্য বিষয় নিয়ে আপনারা শুরু করলেন কী! তিনি উত্তরে কী জানালেন জানেন? "স্যার সংবাদের বড়ই অভাব। তাই এটা নিয়ে লেগে গেছি।"

তিনি আরও লেখেন, গ্রামে মোরগের ডাক আর শহরে মোরগের ডাক এক নয় কখনই। শহরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে ৪/৫ হাত পরপর ৮/১০ তলা বিল্ডিং উঠেছে, সেখানে একাধিক বিল্ডিং থেকে নিশুতি রাতে একাধিক মোরগের ভয়াবহ ডাক নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছি। একজন আপত্তি জানালে জিডি করার কথা বলেছি। আশেপাশের বিল্ডিংগুলোতে কম্পিটিশনে শুরু হয়েছিল মোরগ পালা। সেখানে এই বিষয় নিয়ে যদি অনলাইন পত্রিকার পর পত্রিকা এই সংবাদ নিয়ে পত্রিকাগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে..তাহলে এই দেশে সাধারণ মানুষ কিভাবে বিভিন্ন অন্যায় অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলবে বা প্রতিবাদ করবে! এজন্যই সবাই চুপ থাকে এদেশে। আপনারা কি মনে করেন, মোরগের ডাকে শুধু আমার অসুবিধা হত? তাহলে সব বাসায় আলাদাভাবে তাদের মন্তব্য নিয়ে দেখুন, কী বের হয়ে আসে।

উল্লেখ্য, মাহবুব কবির মিলন আলোচিত-সমালোচিত এক সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরের আগে তিনি এক বছর চার মাসের বেশি সময় ধরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তিনি সবশেষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে তিনি নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরআগে তিনি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং কিছু সময়ের জন্য সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছিলেন। সংকটে পড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন হাইকোর্ট। মাহবুব কবীরকে দেওয়া হয় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব।

ফেসবুকে তিনি পরিচিত এক মুখ। 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমার প্রধান চরিত্র আরিফিন শুভ পুর্বাচলে সরকারি প্লট পাওয়ার খবর প্রকাশের পর তিনি সমালোচনা করেছিলেন। এরপর জানা যায়, চাকরি জীবনে তিনিও নিয়েছিলেন পূর্বাচলের সরকারি প্লট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত