সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ মে, ২০২৪ ১০:২৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে নিহত দুই বাঙালি হত্যার বিচার চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজের দেশের দুই নাগরিক হত্যার জবাব চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কী জবাব দেবে যারা মানবাধিকারের গীত গায়, বাংলাদেশে মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায়, তারা এর কী জবাব দিবে? আমি এর জবাব চাই। আমি এর জবাব চাই- সেই মানবাধিকার সংস্থা, জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছে, যারা আমাদের স্যাংসন দেয়; যারা আমাদের ওপর খবরদারি করে, আমি তাদের কাছে জবাব চাই। আমি জবাব চাই আমার বাঙালি কেন মারা যাবে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চলা আন্দোলন-বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুলিশ তো অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দেয়। ২০১৩ সালে রাস্তায় ফেলে পুলিশকে কীভাবে মেরেছে এটা আপনাদের সকলেরই দেখা আছে। বেশিদূর যাওয়া লাগবে না এই ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা বিএনপি ঘটাল…। মানুষ হত্যা, বাসে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা, সেগুলো তো তারা করেছেই। তা ছাড়া পুলিশের দোষটা কি? যেভাবে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে কখনও কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে যে ঘটনা ঘটাচ্ছে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত সেই একই ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। আমার মনে হয় মানুষের এগুলো ভুলে যাওয়া উচিত না। ভোলা ঠিক না, তারা যে কি অপকর্মটা করে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কয়েক দিন আগে আপনারা টেলিভিশনে দেখলেন প্যালেস্টাইনে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইল। তার বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করছে। এখানে আন্দোলন চলাকালীন একজন মহিলা প্রফেসর, সে বলছে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। কিন্তু পুলিশ তাকে যেভাবে হাত পিছমোড়া করে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছে, তারপরে তাকে যেভাবে অ্যারেস্ট করেছে…। সেখানে ছাত্র-শিক্ষকদের তাদের হাতে লাঠিও ছিল না, আগুন ছিল না। তারা পুলিশের দিকে মারমুখীও ছিল না, তারপরও আমেরিকার পুলিশ যে আচরণটা করেছে…। ওই দেশে যে মানবাধিকার কতটুকু আছে, কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার নিয়ে রিপোর্ট লেখে কিন্তু নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তাদের পুলিশ যেভাবে আচরণ করেছে আমাদের পুলিশ তো সেভাবে আচরণ করেনি। ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো তারা মার খেয়েছে বিএনপির হাতে। তারা যেভাবে মাটিতে ফেলেছে। আজকে যদি আমরিকার একটা পুলিশের গায়ে তাদের কোনো দলের লোক এভাবে হাত দিত, তাহলে তারা কী করত? আর প্রতিনিয়ত তো আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে, আমাকে হত্যা করবে, আবার ১৫ আগস্ট করবে, আমি অনবরত এগুলো শুনে আসছি।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত দুজন বাঙালি হত্যার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাঙালি পরপর কতজন মারা গেছে। সেদিনও দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। হ্যাঁ তারা সেখানে গেছে জীবন-জীবিকার জন্য গেছে। কিন্তু তাদেরকে এভাবে কেন হত্যা করা হবে। তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। ছোট বাচ্চা ছেলে দুটা তাদের হাতে রেহাই পায়নি। একদম হাঁটতে চলতে পারে না, সে প্রেসিডেন্টকে কী বলেছে, তাকে ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে আসছে। বাচ্চা ছেলে মায়ের কাছে, বাড়ির মধ্যে ঢুকে সেই বাচ্চাকে গুলি করে হত্যা করেছে। কী জবাব দেবে? আমি তাদের কাছে জবাব চাই। আমি জবাব চাই আমার বাঙালি কেন মারা যাবে। ওই রকম ছোট্ট একটা শিশু অপ্রাপ্তবয়স্ক মায়ের কোল থেকে নিয়ে কেন তাকে গুলি করা হলো? মহিলা প্রফেসরের ওপরে কেন এরকম জুলুম করা হলো, মাটিতে ফেলে কেন এভাবে হ্যান্ডকাফ পরানো হলো, এর জবাব আমরা চাই। এত সম্পূর্ণ মানবাধিকার লংঘন করা।

শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশের যে অগ্রযাত্রা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের জন্মই-বা কোথায়? তারা হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী। তাদের পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দল…, তাদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়। যারা হ্যাঁ না ভোটে, ভোট চুরি শুরু করেছিল, এরপরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন…, ৮১ সালে সংসদ নির্বাচন, প্রতিটা নির্বাচনই তো আমরা দেখেছি। কীভাবে জনগণের ভোট নিয়ে খেলা হয়েছিল। বেশিদূর যাওয়া লাগবে না ২০০১ সালের নির্বাচন কেমন হয়েছিল। সে নির্বাচনেও চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল।

বিএনপির নেতৃত্বের সমলোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি এমন একটা দল, যার কোনো মাথামুণ্ডু নাই। চেয়ারম্যান ছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং দেশান্তরি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই সুবাদে সারাক্ষণ খালি অনলাইনে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্তেরও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আজকে এরে বহিষ্কার করে, কালকে ওরে দলে ফিরেই নেয়। তাদের কোনো সিদ্ধান্তই নেই। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে কে তারা। যাদের জন্ম হয়েছে ভোট চুরির মাধ্যমে, তারা আবার প্রশ্ন তোলে কীভাবেÑ জনগণই বলুক। দেশের মানুষ তো ভোট দিয়েছে। দেশের মানুষ তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরে খুশি। হ্যাঁ এলাকায়-এলাকায় কিছু সংঘর্ষ হয় সেটা স্থানীয়ভাবে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে, নির্বাচনী ইতিহাস যদি আমরা দেখি তাহলে ২০২৪ সালের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন কবে হয়েছে দেশে?

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, যারা একেবারেই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া- এদের কিছু বক্তব্য; আর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাচ্ছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে, এদেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?

এই গরমে দেশবাসীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জীবন-জীবিকা তো চলবে। এটা থেমে থাকবে না। সবাইকে প্রচুর পানি খেতে হবে। নিজেদের একটু সাবধানে থাকতে হবে। কারণ এটা শুধু বাংলাদেশের অবস্থা না, আমি এইমাত্র থাইল্যান্ড থেকে এসেছি, একই অবস্থা সেখানে। এই গরমে হিমালয়ের বরফের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াটাকে একটি ভালো দিক হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এটাকে সামান্য একটু আশার আলো হিসেবেও উল্লেখ করেন। তিনি সবাইকে বৃক্ষরোপণেরও আহ্বান জানান।

যারা যায় কিছু বলুক না কেন শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্য করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, এ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্লাটিনামজয়ন্তী জাঁকজমকভাবে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, শেখ কামালের জন্ম দিবস, শোক দিবসসহ বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত