২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৮:০৬
ফরহাদ মজহার ও চিন্ময় দাশ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে ‘আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
একইসঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল মানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করতে বলেছেন তিনি।
‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফল’ মন্তব্য করে মঙ্গলবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “হিন্দু মানেই দিল্লির দালাল, বিজেপির এজেন্ট, হিন্দুত্ববাদী এই ধরনের ঘৃণাবোধক সাম্প্রাদায়িক ট্যাগিং পরিহার করুন।”
ফেইসবুক পোস্টে ফরহাদ মজহারের এমন আহ্বানের কাছাকাছি সময়েই মঙ্গলবার চিন্ময় দাশের জামিন নাকচ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় চট্টগ্রামের হাকিম আদালত।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়।
মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় সোমবার বিকালে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে চট্টগ্রামের কোতয়ালি থানায় পাঠায় ঢাকার ডিবি।
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় হওয়া বিক্ষোভের মধ্যে ফরহাদ মজহার লিখেছেন, “গণ বিপ্লব আমাদের চেতনাগত রূপান্তর ঘটায়। এটা বোঝার জন্য সম্প্রতি রংপুর মহা সমাবেশে তার (চিন্ময় দাশ) বক্তৃতা শুনুন। খেয়াল করুন, তিনি কীভাবে জুলাই বিপ্লবের শহীদ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়ে থাকা আমাদের বীরদের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
“শুধু তাই নয়, তার অনুসারীদের বাংলাদেশের পতাকা মাথায় বেঁধে সমাবেশে আসতে বলেছেন। তিনি অকুণ্ঠ চিত্তে রংপুর মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
“এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সকলের চেতনার স্তরে যে গুণগত রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সেই সম্ভাবনা অমূল্য। ওই অমূল্য ধন হারানোর অর্থ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিত্তি হারিয়ে ফেলা।”
এই রূপান্তরকে আরো দ্রুততর করা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ দুঃখ কষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে উপলব্ধি করে অবিলম্বে সকলকে বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেন, “ধর্ম ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। তা করতে হলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ ব্যথা বেদনা অবশ্যই আমাদের সকলকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে শুনতে হবে। সমাধান বের করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশের ‘পক্ষে নয় বরং বিরুদ্ধে’ মন্তব্য করে তিনি লিখেখেন, “মোটা মাথা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সেটা মোকাবেলা করা যাবে না। মূর্খতা পরিহার করুন। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করেন ও ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অ্যান্টেনা সাফ ও তীক্ষ্ণ করুন।”
জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করবার যে শর্ত তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির মধ্য দিয়ে গণরাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী করার কথাও ফরহাদ মজহার বলেন।
জুলাই বিপ্লবের পর শেখ হাসিনার ‘ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার’ শপথ নিয়ে গঠিত অন্তর্বতীকালীন উপদেষ্টা সরকার গঠনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একদিকে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট, অন্যদিকে তথাকথিত আইন ও সাংবিধানিকতার আওয়ামী ফাঁদ– উভয়ের টানাপড়েনে পুরানা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রাষ্ট্রই আসলে কায়েম রয়েছে। আমরা অত্যন্ত দুর্বল, অকার্যকর এবং ‘ভাত দেবার মুরোদ নাই কিল মারার গোঁসাই’ টাইপের একটি অথর্ব সরকার পেয়েছি।
“আমরা দেখছি, অলস মস্তিষ্কের নানান প্রকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ভূয়া খবর ও গুজব ছড়িয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। জুলাই ২০২৪ গণভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করবার জন্য পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোকে প্রধান কৌশল হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।”
চিন্ময় দাশকে ‘পুলিশের অনুরোধে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়াকে’ সরকার ও প্রশাসনে ‘ঘাপটি মেরে বসে থাকা গণবিরোধী ও বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের’ কাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আসুন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমরা আশা করব, সরকার অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেবেন।”
আপনার মন্তব্য