০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ০৮:০৭
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা’ ব্যয়ের যে কথা বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে, তা 'সর্বৈব মিথ্যা ও পরিকল্পিত অপপ্রচার' হিসেবে দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ''সম্প্রতি একটি মহলের অপপ্রচারে দাবি করা হচ্ছে যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ ধরনের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার এবং পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা।''
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ''স্পষ্টতই যেহেতু এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা, স্বাভাবিকভাবেই অপপ্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য সংগ্রহ করেননি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি।''
'জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
''কমিশনের মোট বরাদ্দের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। এই আপ্যায়ন ব্যয়ের সিংহভাগ হয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার সময় এবং কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকে।''
বৈঠকভিত্তিক ব্যয়ের বিবরণ তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রথম পর্যায়ে (২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
“দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভা হয়, যেখানে ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। প্রতিদিনের গড় ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম।”
তৃতীয় পর্যায়ের সভার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, সাতটি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং এই পর্বে মোট ব্যয় ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।
এর বাইরে কমিশনের ৫০টি অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যয় হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা।
রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সাংবাদিক সম্মেলনসহ ১৩টি সভায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪০ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয় ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেননি বলেও জানায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “নয় মাসে অতিথি আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা, যার মধ্যে বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সম্পাদক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অতিথি ছিলেন।''
বিস্তারিত হিসাব তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, '' স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি কেবল মিথ্যাচারই নয়, বরং ঐকমত্য কমিশন ও তার কাজকে হেয় করার এক সংগঠিত ও পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।''
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “কমিশন তার দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সহজেই কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পেরেছেন। সহসভাপতি ও সদস্যরা নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।
“কমিশন আশা করে, যেসব অসাধু মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন, তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। একই সঙ্গে কমিশন বিশ্বাস করে, দায়িত্বশীল গণমাধ্যমসমূহ সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।''
মুহাম্মদ ইউনুসকে সভাপতি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি; আর মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য।
কমিশনের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দারও।
একগুচ্ছ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো দলগুলোকে নিয়ে ১৭ অক্টোবর সই হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেন।
আর সবশেষ ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন।
সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করে এ কমিশন।
আপনার মন্তব্য