নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০০:৫৯

দেশ গড়ার শপথে উদ্দীপ্ত হোক মহান একুশে

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশ গড়ার শপথে উদ্দীপ্ত হয়ে উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও কার্যকরের দাবি এবং বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষার শপথে পালিত হোক এ দিনটি।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি পূরণের ৬৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে এই দিনে। বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় এই দিনটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হবে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন।

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির আত্ম-অন্বেষার পটভূমি বিনির্মাণের গৌরবোজ্জ্বল দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে 'বাংলা'কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতিতে পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন 'মায়ের ভাষা'র মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নবপ্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী ৯ মাস পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় নতুন এক স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ- 'বাংলাদেশ'।

একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সকলের কণ্ঠে বাজছে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত একুশের অমর শোকসঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’ এই শোকসঙ্গীতটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আজ সারাদেশের সবকটি শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠবে।

মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়। ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ বিশ্বে বিরল ঘটনা। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্ব আজ তাকে স্মরণ করছে সুগভীর শ্রদ্ধায়।”

ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় ইতিহাসে ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা অভিহিত করে তিনি বলেন, “এ আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। অমর একুশের অবিনাশী চেতনা পরবর্তীকালে স্বাধিকার ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে যুগিয়েছে অসীম  শক্তি ও প্রেরণা।”

একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বজুড়ে নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষার চেতনার উৎস বলে মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ।

এই চেতনা ধারণ করে বিশ্বের সব ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগ, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর উজ্জীবন এবং সব জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশের প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শহীদ দিবসের বাণীতে তিনি বলেন, “অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক।”

একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও নিরক্ষরতামুক্ত এবং আধুনিক ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস।

বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই দাবি তোলার কথাও স্মরণ করেছেন তিনি।

 শহীদ দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে একুশের চেতনায় ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

“দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের উপর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে জাতি হিসেবে আমাদেরকে নতজানু করে রাখতে চাচ্ছে। ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে মহল বিশেষের সহযোগিতার জন্য।

“যারা দেশকে তাবেদার রাখতে চান তারাই চক্রান্তজাল বুনে আধিপত্যের থাবাকে বিস্তার লাভ করতে সুযোগ দিয়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যাতে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে না পারি।আর এইজন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারও একদলীয় দুঃশাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

২১ ফেব্রুয়ারি দেশে সাধারণ ছুটির দিন। ভাষা শহীদদের স্মরণে এদিন জাতীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান হবে। জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনেও অনুষ্ঠান হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত