সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০১৬ ১৭:৩১

খুনির বদলে তনুর ‘প্রেমিকের খোঁজে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রথমে র‌্যাব, এরপরে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে জন্য নিয়ে যায় সোহাগী জাহান তনুর বাবা, মা ভাই ও বোনকে। র‌্যাব সেনানিবাসের ভেতরেই শুক্রবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের। এরপর শনিবার দিনে ধরে নিয়ে যায় ডিবি।

জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তনুর প্রেম আর প্রেমিক নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করে বলে জানান তনুর স্বজনরা। তনুর সাথে কলেজের কারো প্রেম ছিলো- এ ব্যাপারে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়েরও চেষ্টা চলে।
 
কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান (তনু) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর মা-বাবা ও চাচাতো বোনকে গত শুক্রবার ও শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তনুর মা আনোয়ারা বেগম একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘এক কথা আশি বার জিগগাস করছে। কন ভিক্টোরিয়া কলেজের কার সঙ্গে তনুর সম্পর্ক আছল। আমি তো মেয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে গেলে খোঁজ রাখছি। ভেতরে তো খোঁজ রাখি নাই। এইখানে সে ছোট বেলা থেকে বড় হইছে। সব অনুষ্ঠানে নাচগান করছে। নাটকও করছে। কোনো দিন কোনো কথা উঠে নাই। এখন মেয়ে নাই হাজারটা কথা উঠতেছে।’

তনুকে কেন তাঁর মা-বাবা বিয়ে দেননি এমন প্রশ্নও উঠেছে। তনুর বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের অন্য আত্মীয়দের মধ্যে কারও সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন করা হচ্ছে। এসব জানিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এইগুলা কী জিগাস করে। ক্যান করে? তনুর খুনের সঙ্গে এগুলার কী সম্পর্ক?’

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মুরাদনগরের মির্জাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে আমারে আনছে রাত ১২টার দিকে। কইছে আসামি ধরছে। দেখাইব। পরে ইবা-হিবা কইছে। আমার ছেলেরেও কী কী জিগাইছে। ভোরে আজানের সময় আমারে সোহাগীর আব্বার কাছে দিয়ো গ্যাছে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথিকক্ষে।’

সোহাগীর বাবা ইয়ার হোসেনকেও একই ধরনের প্রশ্ন করা হয় বলে জানান তিনি। ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি তো আমার মেয়ের খুনের বিচার চাই। আমার থাইকা নাম জানতে চায়। আমি কার নাম বলব।’

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সোহাগীর চাচাতো বোন লাইজু জাহান বলেন, ‘আমার কাছ থেকে নাম জানতে চাইছে। আমি বলছি একজন তাকে (সোহাগী) প্রপোজ করছিল। কিন্তু সে খুন করছে এই কথা বলি নাই। কারণ, তাকে কখনো দেখি নাই জোরাজুরি করতে বা ডিস্টার্ব করতে। সে এইখানে থাকেও না।’

সোহাগীর পরিবার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সেনানিবাসের ভেতরে ‘অন্য’দের ঢুকতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘অন্যদের ঢুকতে দিক। তারা দেখুক। ক্যামেরা চেক কইরা দেখুক কে খুন করছে।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহাগীর লাশ সেনানিবাসে তাঁদের বাসার দুই-তিন শ গজ দূরে উদ্ধার হয়। খুন করার আগে হত্যাকারীরা সোহাগীর মাথার হিজাব টেনে খুলে ফেলে, মাথার লম্বা চুল কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে।

২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় সোহাগী খুন হওয়ার সাত দিন পরও সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র‌্যাব-১১ কুমিল্লার উপপরিচালক মেজর মো. খুরশীদ আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আনা হয়েছিল। তাই সোহাগীর মা ও ভাইবোনকে আনা হয়েছিল। তাঁরা কাউকে আটক করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত একটা চলমান প্রক্রিয়া। তার অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সোহাগী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি শুক্রবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত