সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ জুন, ২০১৭ ০১:২৫

ব্যাংকের আমানতের ওপর শুল্ক নতুন নয়: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, 'ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ধার্য নতুন কিছু নয়। এটি আগেই ছিল। এবারের বাজেটে হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।'

সংসদ সদস্যদের (এমপি) সমালোচনার জবাবে মঙ্গলবার চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ ও ফখরুল ইমাম ব্যাংক আমানতের আবগারি শুল্ক বসানোর সমালোচনা করেন। তখন সংসদেকে মুহিত জানান, 'এটা নিয়ে বার বার কথা উঠেছে। আপনারা (এমপিরা) অনবরত দিয়ে আসছেন বহু বছর ধরে। আমি এবার শুল্ক হার একটু বাড়িয়েছি। আবগারি শুল্ক নতুন কিছু নয়।'

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও এ বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলে বলেন, এটা অনৈতিক। মঙ্গলবার জাতীয়  সংসদে সম্পূরক বাজেট আলোচনায় কয়েকজন এমপি সমালোচনা করলে অর্থমন্ত্রী তার জবাব দেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৪ সালের এক্সসাইজ ডিউটি সল্ট অ্যাক্টের আওতায় আবগারি শুল্ক আরোপ ছিল। ১৯৯১ সালে যখন দেশে ভ্যাট আইন প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করা হয়, তখন বিমানের টিকিট ও ব্যাংক আমানত-এই দুটি ছাড়া বাকি সব খাতে ভ্যাট বসানো হয়। ১৯৯১ সালের পর সর্বশেষ ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ব্যাংকের আমানতের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় প্রস্তাবিত বাজেটে আমানতের সীমায় কিছুটা ছাড় দিয়ে হার বাড়ানো হয়। এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে সরকার।

সম্পূরক বাজেট আলোচনায় দেশ থেকে অর্থপাচারের প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে। এমপিদের সমালোচনার জবাবে মুহিত বলেন, 'অর্থপাচার বেআইনি। এটা প্রতিরোধ করার সুযোগ নেই। তবে যেটা আমরা করতে পারি, তা হচ্ছে পাচারের সুযোগ কমানো। এর অর্থ হচ্ছে কালো টাকা দেশে যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী মাসের মধ্যেই তা দেখা যাবে।'

কালো টাকা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, গত দুই  বছর ধরে তার বাজেটে এ সুযোগ নেই। যেটা আছে তা হলো অপ্রদর্শিত আয় জরিমানা দিয়ে বৈধ করার সুযোগ। এটা এখনও আছে। সবসসয়ই থাকবে।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমি আগেই বলেছি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কিছুটা কমানো হবে। সাধারণত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাজারের সুদের হারের থেকে একটু বেশি রাখা হয়। আমি মনে করি, এই পার্থক্য ২ শতাংশের বেশি রাখা উচিত নয়। তবে এটা এখন বেশি আছে। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব। তারপর সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমাব। তবে সময় লাগবে।'

রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ নিয়ে মুহিত বলেন, 'আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রত্যেকটি দেশেরই রেমিট্যান্স কমেছে। এটি কমার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। রেমিটারদের অনেকেই এখন বিদেশে বাসস্থান গড়ছেন। তারা বিদেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এজন্য সেখানে তারা যথেষ্ট সম্পদ রাখেন।'

প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে মুহিত বলেন, 'এবারের বাজেট একটি অত্যন্ত ভালো বাজেট। আমার ৮৪ বছরের যে অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা বা ব্যর্থতা সব কিছু নিয়েই তৈরি করেছি। সম্পূরক বাজেটে সেরকম কৃতিত্ব দাবি করি নাই।'

সম্পূরক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমানতের ওপর শুল্ক আরোপ করায় আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, 'ব্যাংকে এক লাখ টাকা এক মাস রাখলে পুরো টাকা পাওয়া যাবে না। এটা যেভাবে প্রচার পেয়েছে, তাতে এই শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হলেও সরকারের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে তা পূরণ হবে কি-না, প্রশ্ন আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক লাখ টাকা যাদের আছে তারা ধনী। এই বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য?'

জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেন, 'মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না। তাহলে কোথায় যাবে? মাটির নিচে? মাটির নিচেও সমস্যা। মাটির নিচের সম্পদ সরকারের।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত