সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০১৭ ০১:২৯

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলবে

সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি উপদেষ্টা

সুন্দরবন রক্ষায় জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া শর্ত ও সুপারিশ মেনে চলবে সরকার। সুন্দরবনে কী কী ধরনের অবকাঠামো করা যাবে, সে বিষয়ে একটি কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন (এসইএ) প্রতিবেদনও তৈরি করা হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারে জমা দেয়া হবে। সমীক্ষার পাশাপাশি এ সময় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলবে।

গতকাল (রোববার) বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। পোল্যান্ডে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে এ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন উপদেষ্টা। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইউনেস্কো তো প্রতিবেদন তৈরির আগে সুন্দরবনের পাশে কোনো ধরনের ভারী অবকাঠামো ও শিল্প স্থাপন না করার শর্ত দিয়েছে। তাহলে কীভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে? রামপাল কি তাহলে কোনো বড় প্রকল্প নয়?— এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের পাশে আর কোনো ভারী শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণে সরকার অনুমোদন দিচ্ছে না। তবে ইউনেস্কোর এ সুপারিশ ভবিষ্যৎ অবকাঠামোর জন্য। রামপালের কাজ তো আগে থেকেই শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ইউনেস্কো এর আগে রামপাল এলাকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের পাশাপাশি রামপাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেছিল। তাদের সে বক্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল। কারণ সরিয়েই যদি নিতে হয়, তাহলে তো মূল্যায়নের প্রয়োজন থাকে না। সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে যে প্রস্তাব এসেছিল, সেটা পাস হয়নি। এগুলোই হচ্ছে ইউনেস্কোর অবস্থান থেকে সরে আসা। পরিবেশগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা তথ্য ও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পেরেছেন বলেই ইউনেস্কো তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে দাবি করেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

ইউনেস্কোর আগের অবস্থান কী ছিল, আর এখনকার অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, তাদের আগের অবস্থান ছিল রামপালসহ সুন্দরবনের কাছে সব অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রাখা। পরিবেশগত ক্ষতির পরিসংখ্যান তৈরি করে রামপাল প্রকল্প সরানোর কথাও বলেছিল তারা। আর এখনকার অবস্থান হলো সহযোগিতা করা।

সরকার লবিং করে ইউনেস্কোর অবস্থান পরিবর্তন করেছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের অবস্থান আমরা তুলে ধরেছি।

সেটাকে লবিং বললে বলতে পারেন। হেরিটেজ কমিটির ২১ সদস্যের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ জন সদস্য আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন, বিশেষ করে তুরস্ক ও ফিনল্যান্ড।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রামপাল নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এটা অবশ্যই শেষ হওয়া প্রয়োজন। ভালোমতো লেখেন এটা নিয়ে। যেন আর কোনো বিতর্ক না হয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির অধিবেশনে সুন্দরবনের পাশে নির্মাণাধীন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে হেরিটেজ কমিটি রামপাল প্রকল্পের কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন ও ২০১৬ সালে সুন্দরবন নিয়ে ইউনেস্কোর রিঅ্যাক্টিভ মনিটরিং মিশনের দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে বাংলাদেশকে।

বাগেরহাটের রামপালে ভারত ও বাংলাদেশের এ যৌথ বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা। ইউনেস্কোও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত বছর সরকারকে চিঠি দিয়ে রামপাল প্রকল্প সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করে। ওই অবস্থান থেকে ইউনেস্কো সরে এসেছে বলে দাবি করছে সরকার।

বিদ্যুৎ সচিব বলেন, রামপাল থেকে ২০১৯ সালে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ওই বছর জুনে একটি ইউনিট চালুর পর দ্বিতীয় ধাপে ডিসেম্বরে আরেকটি ইউনিট চালু করা যাবে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত