সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুলাই, ২০১৭ ১৬:৫৩

চিকুনগুনিয়া মহামারি হোক আর যাই হোক, সিটি কর্পোরেশন দায়ি নয়: মেয়র আনিসুল

রাজধানীব্যাপী চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, চিকুনগুনিয়া মহামারি হোক আর যাই হোক, এর জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী না। আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারা তাদের পক্ষে সম্ভব না।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকালে গুলশানের ডিএনসিসি কার্যালয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তথা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসির নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ হিসেবে একজন রোগতত্ত্ববিদ ও দুজন কীটতত্ত্ববিদ উপস্থিত ছিলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দুজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যে আকারে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে, যত মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে এটাকে অবশ্যই মহামারি বলতে হবে।

চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এটা মহামারি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে এ বছরের এপ্রিল থেকেই। ভিড় বাড়তে থাকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। আক্রান্তদের বড় অংশ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। কিন্তু তারপরও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী—কেউই এটাকে মহামারি বলতে রাজি নন। বরং চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক দুজনই মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ‘ব্যর্থতাকেই’ দায়ী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন ছিল, চিকুনগুনিয়া মহামারি কি না? উত্তরে রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, একটি নির্দিষ্ট এলাকার যে পরিমাণ মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে এটা অবশ্যই মহামারি। তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ। তবে আরেক বিশেষজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ মুনজুর এ চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মতামত প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মহামারি হোক আর যাই হোক, এর জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী না।’

এরআগে এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরে মেয়র বলেন, যে এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ছড়ায় তা ড্রেন, ময়লা-আবর্জনা কিংবা জলাশয়ে বংশবিস্তার করে না। এডিস মশা মূলত বাসা-বাড়ির ফ্রিজ ও এসির ট্রে, ফুলের টব, ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। এ ছাড়া পড়ে থাকা ভাঙা হাঁড়ি, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার ও বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা এই মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ।

মেয়র আনিসুল বলেন, “চিকুনগুনিয়ার প্রাইম রিজন ঘরের ভেতরে জন্ম নেওয়া মশা; সে পর্যন্ত পৌঁছানো সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না।

“আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।”

করপোরেশনের যেখানে মশা মারার কথা তার চেয়ে বেশি মারা হচ্ছে বলে দাবি করে ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, “এরপর আর কি করব বুঝতে পারছি না।”

এ বছর চিকুনগুনিয়া নিয়ে আগাম কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি বলে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন মেয়র আনিসুল।

তিনি বলছেন, পূর্বাভাস থাকলে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত