সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ আগস্ট, ২০১৭ ১৪:২৭

বঙ্গবন্ধু হত্যায় রাঘববোয়ালদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি: প্রধান বিচারপতি

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত রাঘববোয়ালদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নথি পর্যালোচনা করে দেখলাম, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আরও অনেক রাঘববোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু তদন্তে ত্রুটির জন্য আমরা তাদের আর বিচারে সোপর্দ করতে পারিনি। যদিও আমাদের রায়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, এটি একটি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের বিচারে সোপর্দ করা হয়নি।’

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আমাদের ইতিহাসের একটি মর্মান্তিক দিন। বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্থপতিকে শুধু হারায়নি, তার বিশ্বাস, তার ভবিষ্যৎ সবাইকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল হত্যাকারীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরও কষ্টদায়ক হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে হত্যাকারীদের রাষ্ট্রের আইন দ্বারা বিচারকদের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গর্ববোধ করছি, এ সুপ্রিম কোর্টই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে এ বিচারের রায় প্রশস্ত করেছিল।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ মামলাতে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। আমি আপিল বিভাগের তখন কনিষ্ঠ বিচারক, প্রকৃতপক্ষে আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। সিঙ্গাপুরে তখন ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট চলছিল। ট্রিটমেন্ট থাকাকালে মামলাটি বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে প্রবলেম হয়েছিল। তখনই আমাকে অনুরোধ করা হয় যে, তাড়াতাড়ি চলে আসেন। তখনও আমি জানি না, আমি বাঁচতে পারব কি না। যাই হোক ট্রিটমেন্ট বাদ দিয়ে আমি চলে আসলাম। শপথ নিয়ে তারপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিলাম।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আমি আর বক্তব্য দেব না। আজকে আমাদের জাতির জন্য একটি দুঃখময় দিন। আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর থেকেই পরপর দুই বছর প্রথম আমরা রক্তদান কর্মসূচি পালন করছি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে যে রক্ত ঝরানো হয়েছে তার প্রতিদানে আমরা গরিব-অসহায়দের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করছি।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হলো কাপুরুষোচিত। বঙ্গবন্ধু হয়তো কারো শত্রু বা কারো বিরাগভাজন হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেল, বঙ্গবন্ধুর দুই ছেলে সদ্য বিবাহিত, আজকে পত্রিকায় পড়লাম, তাদের গায়ে হলুদ হয়েছিল। এদের সম্পূর্ণ পরিবারকে ধ্বংস করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ছিল, শেখ রাসেল কিন্তু কোনও পলিটিক্সে ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সমস্ত পরিবারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’

‘এটার সঙ্গে পৃথিবীর কোনও হত্যার মিল পাওয়া যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই যে রকম তারা হত্যা করেছিল,’ প্রধান বিচারপতি বলেন।

তিনি বলেন, ‘এ উপমহাদেশের দু’জন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন হলেন মহাত্মা গান্ধী আরেকজন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু এ দুই মহান নেতার মৃত্যুর কারণ কিন্তু দুটো। মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যে রায়ট লেগেছিল এবং পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাবে রক্তের বন্যা বয়েছিল। কোনও মতেই উনি এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই সরকারকে বলেছিলেন রায়ট বন্ধ করতে।’

‘রায়টের সময় পশ্চিমবঙ্গে শুধু ১০ লাখ লোক মারা যায় এর মধ্যে ২ লাখের উপর মুসলমান মারা যায়। এরপর মহাত্মা গান্ধী আমরণ অনশনে বসলেন এবং বললেন এ রায়ট যদি বন্ধ না করা হয়, আমি অনশন বন্ধ করব না। ভারত সরকার তখন সজাগ হলো, রায়ট বন্ধ হয়ে গেলো। হিন্দু উগ্রবাদী মথুরাম গোৎসে সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করলো। এটা সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধ বিশ্বাস,’ যোগ করেন এস কে সিনহা।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক, এতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। উনি ছিলেন বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সে কারণে আমি আজ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হতে পেরেছি। পাকিস্তান যদি থাকত, হাইকোর্ট পর্যন্ত হয়তো যাওয়া যেত, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি হওয়া কল্পনার বাইরে ছিল। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। এ জন্য করি, আমি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক, সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে আসীন আছি।’

হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে উভয় বিভাগের বিচারপতিরা ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে সহায়তায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সিফিশন মেডিসিন বিভাগ। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, ১২০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত