সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ অক্টোবর, ২০১৭ ১১:০১

বিচারকদের চাকরিবিধি: সরকারকে ২৭ বারের মত সময় আদালতের

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের চার সপ্তাহের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িয়েছিলেন। আজ রাষ্ট্রপক্ষ আবারো ৪ সপ্তাহের সময় আবেদন করলে এ আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এনিয়ে ২৭ বারের মত সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর বিচারকদের চাকরিবিধির এই বিষয়টি রোববারই প্রথম আপিল বিভাগে ওঠে। এর আগে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে আরও ২৬ বার সময় দেওয়া হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দিলেও প্রধান বিচারপতি গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ওই খসড়া গ্রহণ না করে প্রধান বিচারপতি মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডাকলেও আইনমন্ত্রী এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাননি।

এ কারণ ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, “এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম… আলোচনা পর্যন্ত করলেন না?”

প্রসঙ্গত, মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি ‘সিদ্ধান্ত’ দিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধিমালা নিয়ে “রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।”

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মাধ্যমে সরকারকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সময় নেওয়া হচ্ছিল।

এর মধ্যে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। তার ধারাবাহিকতায় তিনি ২৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চাকরিবিধির খসড়া দিয়ে এলেও সর্বোচ্চ আদালত তা গ্রহণ করেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত