সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুলাই, ২০১৭ ১৭:৩৭

শৃঙ্খলাবিধির খসড়ায় অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ নেয়নি আইন মন্ত্রণালয়

বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নে আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ নেয় নি। রোববার (৩০ জুলাই) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল একথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নে আইন মন্ত্রণালয় আমার পরামর্শ নেয়নি। আমেরিকায় এসব বিষয়ে প্রথমে অ্যাটর্নির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মন্ত্রণালয় থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার বিষয়ে কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির কাছে একটা খসড়া দিয়েছেন। আজকে এ বিষয়ক মাসদার হোসেন মামলা তালিকাভুক্ত ছিল। প্রধান বিচারপতি ওই খসড়ার কয়েকটি ধারা সম্পর্কে উনাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

‘এ ব্যাপারে আমাকে আদালত জানিয়েছেন- আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আইনমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের, যাদেরকে সরকার পাঠাতে চান তাদের সঙ্গে বসতে চান ব্যাপারটা সুরাহা করার জন্য। এ ব্যাপারে আমি আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবো’ যোগ করেন মাহবুবে আলম।

তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উনাদের (আইন মন্ত্রণালয়ের) মতামত কী সেটা জানানোর জন্য বলেছেন আদালত। আগামী বুধবার উনারা (আপিল বিভাগ) বসতে চান।’

এরআগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেটের খসড়া গ্রহণ করেননি আপিল বিভাগ। এই বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। এসময় সরকারকে উদ্দেশ্য করে আপিল বিভাগ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আসুন আমরা বৈঠকে বসি।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খসড়া ফেরত পাঠানোর সময়ে বলেন, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝায়, প্রত্যেক আইনে সংজ্ঞায়িত করা আছে। তা আমি আইনমন্ত্রীকে দেখিয়েছি। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলতে বিচার বিভাগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে রাখলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে আইন মন্ত্রণালয়ই থাকছে। এ বিষয়ে সমাধানে না গেলে চলবে না।’

পর্যালোচনা করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গেজেটের তারিখ থেকে কার্যকর হবে বলা আছে। অথচ মাসদার হোসেন মামলায় নির্দেশনা আছে, সুপ্রিম কোর্ট যে তারিখ থেকে কার্যকরের পরামর্শ দেবেন, সেই তারিখ থেকে কার্যকর হবে। উল্টো পাঠিয়েছেন। ১৬ বছরেও হয়নি। এভাবে হলে ১৬০০ বছরেও গেজেট হবে না।’

গত ২৭ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে ওই বিধিমালার খসড়া হস্তান্তর করেছিলেন। পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, 'আজকে (২৭ জুলাই) আমি বিধিমালার খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। এটি এখন তিনি দেখবেন। পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।’

এছাড়াও গত ২০ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ওই বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সরকার।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এজন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকি ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত