সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ২০:২৭

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রে যেতে হবে

পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার হলে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।

মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জেএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ১ নভেম্বর বুধবার থেকে সারাদেশে একযোগে এ দুটি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে; শেষ হবে ১৮ নভেম্বর।

সভা শেষে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ না করলে তাকে আর হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, আগামী সব পাবলিক পরীক্ষায়ও এই নিয়ম কার্যকর করা হবে। জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেএসসি-জেডিসির পর যে সব পাবলিক পরীক্ষা হবে ওইসব পরীক্ষা সূচির সঙ্গেই পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে তা উল্লেখ করা হবে জানান সোহরাব হোসাইন।

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

পরীক্ষার আগের মুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতেই নতুন এ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। অবশ্য তিনি আবার এ-ও বলেন, 'আমরা স্ট্রংলি বলছি, আধঘণ্টা আগে (পরীক্ষার হলে) পৌঁছাতে হবে। না হলে (পরীক্ষা কেন্দ্রে) ঢুকতে দেয়া হবে না—এটা যদি বলে ফেলি, তবে আমরা আর ফিরতে পারব না। যেহেতু প্রথমবার, ছয় মাস আগে যদি বলতে পারতাম! তাই আমরা বলছি, (আধঘণ্টা আগে ঢুকতে না পারলে) ঢুকতে দেওয়া হবে কি-না, সেটা বিবেচনা করা হবে। আমাদের কথা হলো, আধঘণ্টা আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে অবশ্যই ঢুকতে হবে। না হলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পরে বোঝা যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগামী বছর থেকে আমরা ৬ মাস বা ৩ মাস আগে থেকে প্রচার শুরু করব। আধঘণ্টা আগে না ঢুকলে (পরীক্ষাকেন্দ্রে) ঢুকতে পারবে না।'

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, 'নেক্সট থেকে আমরা যখন পাবলিক পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করব, তখন আমরা এটা (আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে) বলে দেব।'

সভায় কেউ কেউ পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধের প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'কোচিং সেন্টারের একটি বড় বাণিজ্যের কারণ হলো যেখান থেকে প্রশ্ন আউট হয়, তা সঠিক প্রমাণিত হলে সেখানে ব্যবস্থাটা পরের বছর (নেয়া) আরও ভালো হয়।'

তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে আমাদের যে আইন (শিক্ষা আইন) হচ্ছে তাতে কোচিং সেন্টারই থাকবে না। পরীক্ষা কী, আর অপরীক্ষা কী, কোন সময়ই কোচিং সেন্টার থাকবে না। সেটা আমরা পাস করতে পারলে...এখন তো বন্ধ করলে কোর্টে গেলে পেয়ে যায়।'

মন্ত্রী আরও বলেন, 'এবার পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কেবল মাত্র কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ (ক্যামেরা সংযুক্ত নয়) ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন। এ ছাড়া পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কোন ব্যক্তি বা শিক্ষক কোনো ফোনই সঙ্গে রাখতে পারবেন না।'

সভায় উপস্থিত ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, 'প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এক বছরে ৯টি মামলায় ৫৭ জন গ্রেফতার হয়েছে; এর মধ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের লোকজন রয়েছেন। এর মধ্যে এইচএসসিতে ১৮ জন ও এসএসসিতে ৩৫ জন। বাকিরা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রেফতার হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'এসব মামলার কোনোটারই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে।'

কেন্দ্র সচিবরা ক্যামেরাবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি যথাযথভাবে মানছেন না—জানিয়ে নাজমুল আলম বলেন, 'এটা যাতে কড়াকড়িভাবে মানা হয় তা দেখতে হবে।'

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'গত এসএসসিতে অবজেকটিভ নিয়ে যে জিনিসিটা হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতরা সবাই শিক্ষক। এটা অপ্রিয় সত্য কথা।'

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্র সহজেই জামিনে বেরিয়ে বের হয়ে আসে জানিয়ে তিনি এ সংক্রান্ত আইনে কঠিন শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব দেন।

সভায় কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত