সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ২০:৫৬

রেকর্ড গড়ে আবারো ‘বন্দি জীবনে’ আবদুল হামিদ

তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে জাতীয় অঙ্গনে উঠে আসা মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে রেকর্ড করলেন।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুল হামিদকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানান।  

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানে সর্বোচ্চ দু’বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটিই হবে আবদুল হামিদের শেষ মেয়াদ। এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ।

গত ২৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়া তারিখ ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি এবং নির্বাচনের তারিখ ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের নাম দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। এ নির্বাচনে আর কেউ প্রার্থী না হওয়ায় ভোটাভুটির আর প্রয়োজন হয়নি।

বিভিন্ন সময় হাস্যরসে বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন পছন্দ না হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দ্বিতীয় বারের মত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আরো দীর্ঘায়িত হলো রাষ্ট্রপতির এই ‘বন্দি দশা’।

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছিলেন, “জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে ছিলাম। এখনও জেলে আছি। পার্থক্য আগে স্যালুট দিতো না, এখন দেয়।”

কিশোরগঞ্জের আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে তুলে বেশ জনপ্রিয়তা পান। পরে স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর এক মেয়াদে সংসদ উপনেতাও ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিয়ম অনুসারে দলের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদ ঘটাতে হয়।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম আবদুল হামিদের। কৈশোরেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন; কলেজ জীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে পরে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের  ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ। আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।

২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনে ঠাই হয় তৃনমূল থেকে রাজনীতি করে আসা আবদুল হামিদের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত