সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ২১:৪৫

শেখ হাসিনাকে কামালের চিঠি, সংলাপের আহ্বান

সাত দফা দাবি নিয়ে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এই জোটের দুই নেতা আ ও ম শফিক উল্যাহ ও জগলুল হায়দার আফ্রিক রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে গিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্যাডে লেখা কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পৌঁছে দেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত এই জোটের চিঠি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

চিঠিতে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাকে একটি ‘সঙ্কট’ উল্লেখ করে তা থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণার কথা বলেন কামাল।

তিনি লিখেছেন, “একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে একটি অর্থবহ সংলাপের তাগিদ অনুভব করছে এবং সে লক্ষ্যে আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।”

নির্বাচনের আগে তোলা এই ৭ দাবি পূরণ কিংবা এই ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা আওয়ামী লীগের নেতারা নাকচ করে আসার মধ্যে এই চিঠি গেল শেখ হাসিনার কাছে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পাশাপাশি একই চিঠি ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও দেওয়া হয়েছে।

বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই চিঠিটি শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বলার মাধ্যমে, সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত যে উপাধি নিয়ে আপত্তি রয়েছে জিয়াউর রহমানের দলের নেতাদের।

চিঠি শুরু হয়েছে এভাবে- “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা।”

বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা কামাল জাতির জনককে স্মরণ করে আরও বলেছেন, “এক ব্যক্তির এক ভোট- এই বিধান জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুই নিশ্চিত করেছেন, যা রক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।”

চিঠিতে বর্তমান সঙ্কটের জন্য নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী না করে কামাল লিখেছেন, “নেতিবাচক রুগ্ন রাজনীতি কিভাবে আমাদের জাতিকে বিভক্ত ও মহাসঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, তাও আমাদের অজানা নয়।”

চিঠির শেষে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।

চিঠি হস্তান্তরের পর গণফোরাম নেতা আফ্রিক সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা যে ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য দিয়েছি, এগুলো নিয়ে সরকারের সাথে সংলাপে বসতে চাই। সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। চিঠিতে সেই বিষয়গুলোই আছে।”

আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে দুটি চিঠি দিয়েছেন। আমি এসব গ্রহণ করেছি। এটা যথাযথ জায়গায় পৌঁছিয়ে দেব।”

বিএনপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে কামাল গত ১৩ অক্টোবর যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছেন, তাদের সাত দফার মধ্যে রয়েছে সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না বলে তাদের মত।

ভোটের কয়েক মাস আগে এখন এই সব দাবি পূরণের কোনো সুযোগ নেই দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। অর্থাৎ ভোটের সময় শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, সংসদও বহাল থাকবে।

বিএনপির সঙ্গে জোট গড়ায় গণফোরাম সভাপতি কামালের সমালোচনাও করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চিঠি পাওয়ার আগে রোববার বিকালে ঢাকার পল্লবীতে গণসংযোগের সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, “হায়‌রে ড. কামাল হো‌সেন! আপ‌নি এখন কোথায় গে‌লেন!

“আপ‌নি একজন খুনি-সন্ত্রাসী তা‌রেক রহমা‌নের নেতৃত্ব মে‌নে নি‌য়ে‌ছেন, সম্প্রদা‌য়িক শ‌ক্তির সা‌থে হাত মি‌লি‌য়ে‌ছেন। আপ‌নি বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী হ‌য়ে বঙ্গবন্ধুর খ‌ুনি‌দের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এটা লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত