সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:১১

‘অর্থনৈতিক দুরবস্থার’ সংবাদমাধ্যম

প্রধানমন্ত্রীকে বললেন সাংবাদিকরা

বাংলাদেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম ‘অর্থনৈতিক দুরবস্থার’ মধ্যে পড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

সম্প্রতি ব্রুনেই সফর নিয়ে শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে টেলিভিশন ও মুদ্রিত পত্রিকার সংকট তুলে ধরেন অন্তত দুজন সাংবাদিক।

এক সাংবাদিক বলেন, বিজ্ঞাপনের অভাবে টেলিভিশন শিল্প রুগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে। আরেক সাংবাদিক জানান, প্রিন্ট মিডিয়ার মরণ দশা হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জবাবে মুদ্রিত সংবাদমাধ্যমকে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের অনেক নামকরা সংবাদমাধ্যম এখন ছাপা পত্রিকা বাদ দিয়ে অনলাইনে চলে এসেছে।

আর টেলিভিশন নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রুগ্ন শিল্প’ হচ্ছে বলা হলেও এখনও অনেকে নতুন চ্যানেল চাচ্ছেন।
সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন প্রধামন্ত্রী: “ওয়েজবোর্ড নিয়ে সরকার পক্ষ থেকে যতটুকু করণীয় আমরা কিন্তু সেটা করে দিয়েছি। এটা নির্ভর করছে যে, মালিকপক্ষ তারা কতটুকু বাস্তবায়ন করবে। এখানে আমাদের দায়দায়িত্ব নেই।”

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম মজুরি বোর্ড গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সুপারিশ জমা দেয়। ওই সুপারিশ পর্যালোচনা করে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি হয়।

এরমধ্যে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পর নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন হলে ওই মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন হয়। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এই খাত এখন রুগ্ন শিল্পের মতো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিজ্ঞাপনের বাজারটা চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছিল দেশের আইন ভঙ্গ করে। এছাড়া নতুন নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে ফেইসবুক, ইউটিউব। এগুলোতে অনেক বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে।  আর এতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আর্থিক সংকটে রুগ্ন হয়ে পড়ছে।

সাংবাদিক জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনি বলছেন রুগ্ন শিল্প হচ্ছে। কিন্তু দেখছি এখনও অনেকে নতুন চ্যানেল চাচ্ছে।

“কালকে আমার তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হল, আমি বললাম যত চাচ্ছে সবই দিয়ে দাও। আর কিছু না হোক কিছু লোকের তো চাকরি হবে। কর্মসংস্থান হবে।”

চ্যানেলগুলো পরিচালনায় ব্যয় সাশ্রয়ের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি। স্যাটেলাইটও করে দিয়েছি। এখনতো স্যাটেলাইটের মধ্যে চালাতে পারে। এমনকি স্যাটেলাইট বিনা পয়সায় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না তো। অথচ বিদেশি ইসেৃ অনেক টাকা দিচ্ছে। কাজেই এখানে টেকনিক্যাল কিছু আছে, যার ব্যাপারে আমি বসেছিলাম। কীভাবে আমাদের প্রত্যেকটা চ্যানেল আরও অল্প খরচে করতে পারবে।

“কেবল অপারেটরদের চ্যানেল যত সামনে থাকবে তত আগে মানুষ দেখবে। কেবল অপারেটরদের খুশি করার সেটাও তো একটা বিষয় আছে। অনেকে তো আবার খুশি করে সামনেও নিয়ে আসে। ওই টেকনিক্যাল ব্যাপারও তো আছে। আছে অনেক কিছুই।”

ভালো অনুষ্ঠান হলে মানুষ ওই চ্যানেলের প্রতি আকৃষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে যেমন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, আরও আধুনিকতায় নিয়ে যায়, বিশ্বকে জানার সুযোগ করে দেয়। আবার সমস্যাও সৃষ্টি করে।

“আমরা যদি এক ধরনের ধারাবাহিকতায় চলতে থাকি তাহলে কিন্তু হবে না। সারা বিশ্বে অনেক নামিদামি পত্রিকা সেগুলো কিন্তু বন্ধই হয়ে গেছে। কারণ অনেক পত্রিকা এখন অনলাইনেই চলে, কোনও ছাপা হয় না। এ রকম বহু নামকরা পত্রিকা তারা কিন্তু চলে গেছে অনলাইনে।”

এটাকে প্রযুক্তির প্রভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ও আধুনিকতার প্রভাবে এভাবে বিবর্তন আসতেই থাকবে। তবে এ বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এটা হল বড় কথা।”

বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সংবাদপত্র থাকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দৈনিক পত্রিকা প্রায় ৭০০ এর ওপরে। মফস্বলে আমাদের প্রচুর পত্রিকা। এত পত্রিকা মনে হয় পৃথিবীর কোনও দেশে চলে না। কোনও দেশে নাই।

“সিঙ্গাপুরে একটি মাত্র কোম্পানি। তাদের পত্রিকা। সেটাও সরকার স্পন্সরড। তাদেরই বিভিন্ন ভাগাভাগি। ব্যবসা, খবর, বিনোদন, স্পোর্টস এ রকম ভাগাভাগি। অন্যান্য সব দেশেও। আমাদের প্রতিটি আশপাশের দেশে দেখেন। আমাদের মতো এত পত্রিকা কিন্তু কোনও দেশে নেই।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত