সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:৫৮

খাস কামরা কেন থাকে?

জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের একটি সেক্স টেপের জের ধরে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। এরপর এনিয়ে শুরু হয়ে তদন্ত। জেলা প্রশাসকের খাস কামরায় গোপন ক্যামেরায় একজন নারী ও পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদদাতাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক বিশ্রাম করার জন্য কিছুদিন আগে ওই খাস কামরাটি তৈরি করেছিলেন।

কর্মকর্তাদের দপ্তরের কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া বিশ্রাম কক্ষকে খাস কামরা বলা হয়ে থাকে, যেখানে তিনি কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। সাধারণত অফিসের প্রধান ব্যক্তিরাই এ ধরণের কক্ষের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলী খান বলছেন, এ ব্যাপারে সরকারি কোন বিধান নেই বা সরকারিভাবে কিছু বলা নেই। তবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।

''অনেক সময় মূল অফিসে অনেক মানুষের সামনে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না। যেমন বিচারক অনেক সময় তার খাস কামরায় আইনজীবীদের ডেকে নিয়ে আলোচনা করেন। ফলে গোপনীয়তা রক্ষার জন্যেও এ ধরণের ব্যবস্থার দরকার হয়'', বলেন তিনি।

প্রশাসন, পরিষেবা, হাসপাতাল, পানি বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন, থানাসহ সরকারি অনেক দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাদের মূল কক্ষের সঙ্গে খাস কামরা থাকে। সাধারণত দিনের বেলায় কাজের ফাঁকে কর্মকর্তারা এসব কক্ষ ব্যবহার করে থাকেন। অনেক অফিসে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এসব খাস কামরায় সেরকম ক্যামেরা বসানো হয় না। তবে যে ডিসি অফিসের ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে গোপনে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল বলে অনেকে ধারণা করছেন।

ওই ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন একজন কর্মকর্তার জন্য এরকম বিশেষ সুবিধা থাকবে? যেখানে তিনি কাজের জন্য গেছেন, সেখানে তার জন্য আলাদা বিশ্রাম কক্ষ থাকবে কেন, এই প্রশ্নও উঠেছে। তবে সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলছেন, ''যারা এসব কথা বলেন, তাদের আসলে সরকারি কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই।''

''সরকারি দপ্তরের প্রধান ব্যক্তিদের অনেক সময় দীর্ঘসময় ধরে বা কোনরকম কর্ম ঘণ্টা ছাড়াই কাজ করতে হয়। ডিসি, এসপির মতো কর্মকর্তাদের অনেক সময় দিনরাত কাজ করতে হতে পারে। ফলে তাদের বিশ্রামের জন্য এ ধরণের কক্ষ দরকার হয়।''

এছাড়া সরকারি কাজের গোপনীয়তার জন্যও এরকম কক্ষ দরকার বলে তিনি বলছেন।

এদিকে, ঔপনিবেশিক আমলের এই প্রথা এখনো চালু থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জান বলছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এসব খাস কামরার চল থাকলেও, সম্প্রতি যে ঘটনাটি আমরা দেখলাম, এরকম অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত বিরল। যে উদ্দেশ্যে খাস কামরার বিষয়টি এসেছে, এখন যেন সেই মূল উদ্দেশ্য পাশ কাটিয়ে সেটার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের যেসব দেশের সংস্কৃতি থেকে এই খাস কামরার প্রথা এসেছে, সেই দেশে কিন্তু এখন এটা আর নেই। ফলে এখন আমাদেরও বিবেচনা করা উচিত যে , বর্তমান সময়ে আসলে এর আর কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা? বিশেষ করে সাম্প্রতিক ডিসির ঘটনার প্রেক্ষিতে সেটা আরও জোরালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।''

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, বাংলাদেশে প্রশাসনিক সব ক্ষেত্রেই জায়গার স্বল্পতার একটি বিষয় রয়েছে, সেই সঙ্গে কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধার আগে আধুনিক সেবার মান আগে নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত