সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ আগস্ট, ২০১৯ ২০:২০

তদন্ত নিয়ে পুলিশের কথা বলার নীতিমালা চান হাই কোর্ট

মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করায় বরগুনার এসপি মারুফ হোসেনকে সতর্ক করলেন হাই কোর্ট

বরগুনার রিফাত শরিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিনের আদেশের পর্যবেক্ষণে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেনকে সতর্ক করেছেন হাই কোর্ট। তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে পুলিশ কী ধরনের কথা বলতে পারে এ নিয়ে নীতিমালা তৈরি করতে স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে পদক্ষেপ নিতে বলেন আদালত।

আদালত বলেছেন, এ ধরনের দায়িত্বশীল পদে থেকে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে বলে মিডিয়ায় এসপি যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। যেহেতু তদন্তকাজ চলমান সেহেতু আদালত এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মিন্নির জামিনের রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন।

হাই কোর্ট বলেছেন, ইদানীং অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে মামলার তদন্ত নিয়ে উৎসাহী বক্তব্য দিতে দেখা যায়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে বিচারে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যাবে না।

আদালত বলেন, তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু প্রচার করা যাবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। নীতিমালা যাতে প্রণয়ন করা হয় সেজন্য স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের আইজিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে হাইকোর্ট।

আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ার আগেই মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মারুফ হোসেন। বিষয়টি নজরে আসায় এসপির ব্যাখ্যা চান আদালত। বুধবার (২৮ আগস্ট) এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিসহ হাজির হন। সেই সাথে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপির দেয়া লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর আদালত এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দিন ধার্য করেন। এদিন রায়ে আদালত মিন্নিকে ৬ শর্তে জামিন দেন।

আদালতে মিন্নির জামিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম, রোহানি সিদ্দিকা ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশাকে। কিন্তু আয়েশার শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়েশা জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটির তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়।

পরবর্তীতে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় মিন্নিকে। আর এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

অন্যদিকে গত ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত