সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২০:৪৮

পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতকে তলব করে গণহত্যার দায় অস্বীকার এবং চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে পাকিস্তানের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক স্থগিত করার দাবিতে আজ বিকালে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

চারটার কিছু পরে দিনের কর্মসূচী শুরু হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, ভাস্কর রাশা, তাহমিন সুলতানা স্বাতী প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “পাকিস্তান স্পষ্টভাবেই জানে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে তাদের দোসরদের বিচার শেষ হলে অবধারিতভাবেই পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটি আসবে। সেকারণেই তারা এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করছে আর একাত্তরের গণহত্যায় তাদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে। এছাড়াও একাত্তরের গণহত্যায় যারা পাকিস্তানকে মদদ দিয়েছে, সেসব দেশের মানবাধিকারের নামে কিছু দানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। তারাও বুঝতে পেরেছে, এ বিচার চলতে থাকলে ধাপে ধাপে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে আসবে এবং তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যারাই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তারা কেউই রেহাই পাবে না, এ আশংকা তাদের রয়েছে। একারণেই তারা সংঘবদ্ধভাবে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা করে যাচ্ছে”।

পাকিস্তানের এই মিথ্যাচার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দাবি করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবেই গোয়েবলসীয় কায়দায় গণহত্যার দায় অস্বীকার করে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। কিন্তু চোর যেমন চুরি করলে প্রমাণ রেখে যায়, তেমনি তাদের অপরাধেরও অসংখ্য প্রমাণ রয়ে গেছে। বিশ্বের প্রথম পাঁচটি উল্লেখযোগ্য গণহত্যার মধ্যে পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যা একটি, গিনেস বুকে তার রেকর্ড রয়েছে। ১৯৭১ এ পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানের পরাজয়ের কারণ তদন্ত করতে যে “হামুদুর রহমান কমিশন” গঠন করেছিলো, সেখানে পাকিস্তানি সৈন্যদের ধ্বংসযজ্ঞকে সীমিতভাবে দেখানো হলেও গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের বর্ণনা উঠে এসেছে। যে শিমলা চুক্তির কথা বলা হয়েছে, সেখানেও ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তান করবে, সে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। গণহত্যার দায় অস্বীকার করেই এ বিচার থেকে খালাস পাওয়ার উপায় নেই”।

তিনি আরো বলেন, “বিশ্বের যেখানেই স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে, নতুন দেশ জন্ম হয়েছে, সবখানেই সম্পদ ভাগাভাগি হয়েছে। বৃটিশ শাসনের অবসানের পর যখন ভারত-পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে, তখনও সম্পদ ভাগাভাগি হয়েছে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, শুধু পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই নয়, সেই সাথে বাংলাদেশের পাওনা অর্থ আদায়ের ব্যাপারেও তৎপর হতে হবে”।

সরকারকে ‘নমনীয়’ আখ্যা দিয়ে ইমরান বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ যখন পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, সরকার তখন বাণিজ্য মেলায় পাকিস্তানিদের রমরমা ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। সরকার পাকিস্তানি পণ্য আমদানী করে যাচ্ছে, সেই পাকিস্তানি পণ্যের সাথে পাকিস্তানি জঙ্গিবাদও আমদানি হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে এদেশে এসে নাশকতা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাকিস্তানের সাথে সবরকমের সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে চিরুনি অভিযান চালিয়েও আর জঙ্গি খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ সরকারের দৃশ্যমান কার্যক্রমে মনে হচ্ছে পাকিস্তানের প্রশ্নে তাদের অবস্থান নমনীয়। আমরা আবারও বলছি, জঙ্গিবাদ ও পাকিস্তানের প্রশ্নে নমনীয়তার কোনো সুযোগ নেই। বিষধর সাপের সাথে আপোষ করলে তার ছোবল আজ হোক, কাল হোক খেতে হবেই”।

ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আমরা এই ন্যাক্কারজনক বক্তব্য প্রত্যাহার এবং গণহত্যার দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে পাকিস্তানি দূতাবাস ঘেরাও করে তাদের ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছিল , আবারও একইভাবে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাংলাদেশের মানুষ দুবার ভাববে না”।

পরে বিক্ষুব্ধ স্লোগানমুখর একটি মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগ এসে শেষ হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত