সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০২:৩১

আজ আরেক ৫ জানুয়ারি : ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস

আজ আরেকটি ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ কয়েকটি দলের অংশগ্রহণ বিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে এক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। শুরু হয় জ্বালাও পুড়াও।

আজ তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বর্ষে পা দিচ্ছে সরকার। যদিও প্রথম থেকেই বর্তমান সরকারকে 'অবৈধ সরকার' বলে আসছে বিএনপি। ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে দেশজুড়ে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। অপরদিকে আজকের দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিসব আখ্যা দিয়ে আনন্দ মিছিল করবে আওয়ামী লীগ।

দুই দলের এই মুখোমুখি অবস্থানের কারণে কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নেই শঙ্কা। রাজনৈতিক অস্থিরতাও অনেকটা শিথিল হয়ে এসেছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। একে ঘিরে এরপর দীর্ঘদিন ধরে চলে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

বিএনপি-জামাত জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হতাহত বহু মানুষ। শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনেই সহিংসতায় নিহত হন ২২ জন। নির্বাচন প্রতিরোধ করতে বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে।  

২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে চলা অস্থিরতা এরপর চলতেই থাকে। সেটির ভয়াবহ রূপ দেশবাসী দেখে ২০১৫ সালের বর্ষপূর্তি ঘিরে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামাত জোট। সরকার ও আওয়ামী লীগও মাঠে নামে কর্মসূচি ঠেকাতে। কর্মসূচিতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকেন। টানা ৯২ দিনের ওই অবরোধ-হরতালে নাশকতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় পেট্রোল বোমায়।

ফলে ৫ জানুয়ারি দেশবাসীর কাছে এক আতঙ্কের দিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে পরের বছর ২০১৬ সালে পরিস্থিতি আর অতটা ভয়াবহ রূপ নেয়নি দিনটি ঘিরে। এর জন্য অবশ্য তত দিনে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে বিএনপির কোণঠাসা হয়ে পড়া এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটা ভূমিকা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ২৮ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা অনেকটাই কমে আসে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী দেয়।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামাত জোট আরে তেমন কোনো বড় ধরনের সহিংসতার দিকে যায়নি। ফলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ একটি দিন কাটায় ঢাকাবাসী। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামাত জোট পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মিছিল, সভা করলেও নগর প্রশাসনের কৌশলী নানা ব্যবস্থায় বড় ধরনের কোনো নৈরাজ্য কিংবা সহিংসতার সৃষ্টি হয়নি সেবার।

৫ জানুয়ারি নিয়ে গত দুই বছর মানুষের মধ্যে আগে থেকে যে ভয় জেঁকে বসত, এবার সেটি অনুপস্থিত অনেকটা। দিনটি নিয়ে তেমন একটা আলোচনাও নেই সাধারণের মানুষের মধ্যে। নেতাদের বক্তৃতা-বক্তব্য বাদ দিলে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির বিশেষ কোনো কর্মসূচি নেই দিনটি ঘিরে। অন্তত ঢাকার পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। ঢাকায় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সারা দেশের জেলা, উপজেলায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে মিছিল, মিটিং করবে বলে বিএনপি আগেই জানিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত