সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ০১:২০

সিইসি নুরুল হুদার পরিচয়

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন সিইসি হিসেবে কে এম নুরুল হুদাকে নিয়োগ দিয়েছেন। নতুন সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নুরুল হুদা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দেওয়া কোন তালিকাতেই ছিলেন না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সিইসি হিসেবে যাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সুপারিশে সিইসি হিসেবে তাঁর নাম ছিল না।

তিনি আরও বলেন, সিইসি হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে মাহবুব তালুকদারের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। আর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানমের নাম সিইসি হিসেবে সুপারিশ করেছিল আওয়ামী লীগ।

নিয়োগপ্রাপ্তির পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন সিইসি বলেছেন সাংবিধানিক দায়িত্ব আইন মেনে ও নিরপেক্ষভাবে পালন করবেন। রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আমাকে সাংবিধানিক এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ায় কৃতজ্ঞ। সাংবিধানিক দায়িত্বটি আমি নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও আইন মেনে পালন করব।

এর আগে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তথ্য দেন। বঙ্গভবনের সম্মতি নিয়েই এসব নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।

সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সিইসির সঙ্গে চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের মেয়াদ শেষ হবে। একই সঙ্গে মেয়াদ শেষ হবে আরও তিন কমিশনারেরও। ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হবে কমিশনার শাহনেওয়াজের।

নূরুল হুদা পটুয়াখালীর বাউফলের সন্তান। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পটুয়াখালী জেলা পাক হানাদার মুক্ত করতে ভূমিকা ছিল তার।

১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া নূরুল হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যা বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক এ ছাত্র ১৯৭২-৭৩ সালে হল ছাত্র সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই বরিশাল অঞ্চলে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নূরুল হুদা। পরে জাসদের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল তার।

নূরুল হুদা ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ৩০ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।

চাকরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছাড়াও কিছু মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকার সময়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারি এবং ১২ জুলাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন নূরুল হুদা। এছাড়া তিনি এরশাদ আমলে ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের ২৪ জুলাই বিএনপি ক্ষমতায় এসে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে নূরুল হুদাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। সর্বোচ্চ আদালত পরে বিএনপি সরকারের ওই আদেশ বেআইনি ঘোষণা করে। পরে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন এবং সব ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

যুক্তরাজ‌্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন নূরুল হুদা। সরকারি চাকরি শেষে ২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে, ছিলেন ৫ বছর। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত