সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ মে, ২০১৭ ২১:৪৬

নেতাকর্মীরাও সিলেটের এমপিদের কাছে যেতে পারেন না, অভিযোগ কামরানের

আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সংসদ সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতারা। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার উপস্থিতি এই সভায় দলের অঙ্গসংগঠন, অনুপ্রবেশকারী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অনুপ্রবেশের কথাও বলেন তারা।

শনিবার গণভবনে সারা দেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ধিত সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে বলেন, 'সিলেটে ১৯টি সংসদীয় আসনে এমপিরা বিজয়ী হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিশাল পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। জনগণ এবং সাধারণ নেতা-কর্মীরা এমপিদের কাছে যেতে পারে না।'

কামরান বলেন, ‘সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো কমিটি দেওয়ার সময়ে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি দেয় না। ঢাকা থেকে কমিটি দেয় আমরা জানি না, চিনি না। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংগঠন।’

বর্ধিত সভায় দলের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি জহিরুল হক খোকা বলেন, “আওয়ামী লীগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খন্দকার মোশতাক ঢুকে গেছে।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তারই মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে জাতির জনকের খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করেছিলেন।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, “আপনি যদি শক্ত হাতে ধরতে না পারেন; তাহলে আমরা টিকতে পারব না।”

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গণভবনে এই সভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, “আমরা পার্টিকে আরও স্ট্রংগার, আরও সুশৃঙ্খল এবং আরও স্মার্ট করব। স্মার্টার আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।”

জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূইয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা বেগমকে সদস্য করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়।

এরপর দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেওয়া ল্যাপটপ হস্তান্তর করেন শেখ হাসিনা।

তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের শুরুতেই রংপুরের রেজাউল করিম রাজু বলেন, “আমাদের সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য দেন, তাতে ভয় পাওয়ার কারণ আছে।”

রংপুর জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন কমিটি কীভাবে করা হচ্ছে, তা জানেন না জানিয়ে জেলাটির এই নেতা বলেন, “কমিটি ঢাকা থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”

তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন রাজু।

মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এমপি-মন্ত্রীদের ঘিরে একটি বলয়ের সৃষ্টি হয়। ওই বলয়ের বাইরে তারা আসতে পারেন না।”

কোন্দল নিরসনের উপায় বের করার তাগিদ দিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, “উনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা ১৬ কোটি লোক থাকব।”

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনর রশীদ বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমি যদি শৃঙ্খলার বাইরে যাই, তাহলে আমাকেও চিরতরে বহিষ্কার করে দেন।”

সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ উল্লেখ করে সেগুলো পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

দলের বক্তব্য এক স্থান থেকে আসার পক্ষে মত জানিয়ে হারুন বলেন, “স্পোকসম্যান যেন একজন হয়। অনেকে হলে আমাদের জন্য অসুবিধা।”

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ দলের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়ে ময়মনসিংহের জহিরুল হক খোকা বলেন, “আপনি যদি মাফ করে দেন.. বুঝে গেল। তারপর একই কাজ করবে। আর মাফ করবেন না।”

উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সদস্যদের মধ্যে ‘অশুভ প্রতিযোগিতার’ কথা উল্লেখ করে তার অবসান ঘটাতে বলেন তিনি।

সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের এই নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন করছেন। এমপিরা কী করছেন; তাও দেখতে হবে।”

চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদও সহযোগী সংগঠন সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “সহযোগী সংগঠনগুলোকে এখান (ঢাকা) থেকে বিপরীতমুখী করা হলে অসুবিধা হয়।”

সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এমপি সাহেব থানা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিকে রাখতে চান না।”

কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করে মোসলেম বলেন, “অনেক সংগঠনকে দোকান বলা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারাই তাদের ১৫/২০ জনকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান।”

সবার কথা শোনার পর শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে দলের নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের তাগিদ দিয়ে বলেন, “নিজস্ব অফিস থাকা চাই। আপনারা উদ্যোগ নেন, আমরা সহযোগিতা করব।”

কার্যালয়গুলো সচল রেখে সরকারের উন্নয়নের প্রচার চালাতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি।

সংসদ সদস্যদের জেলা নেতাদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করতে বলেন শেখ হাসিনা।

সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিকল্পিতভাবে করার পরামর্শ দিয়ে দলীয় সভানেত্রী বলেন, এজন্য জেলা কমিটিকে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সাব-কমিটি করে দিতে হবে।

“মুড়ি বই ফেরত দিতে হবে। আমি এবার হিসাব নেব।”

জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “পেশিশক্তি বৃদ্ধিতে অনেকেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মী এবং সন্ত্রাসীদের দলে টেনেছেন।

“এরা এসে দলের ক্ষতি করে, খুন করে। দয়া করে দল ভারী করার জন্য এদের টানবেন না।”

মামলা থেকে বাঁচতে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগীদার হতে এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এরা দলের মধ্যে খুন করে। তারা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে, তাদের কুনুইয়ের গুতায় আমার নেতা-কর্মীরা টিকতে পারে না।”

সম্মেলনের সাত মাসের মধ্যে বর্ধিত সভার আয়োজন করায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদও জানান সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র : বিডিনিউজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত