সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ আগস্ট, ২০১৭ ০১:০৯

ইসিতে আয়ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়নি ৫টি দল

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নির্বন্ধির ৪০টি দলের মধ্যে ৩৫টি দল তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। বিকল্প ধারা, বিএনএফসহ পাঁচটি দল এই সময়ের মধ্যে হিসাব জমা দিতে পারেনি। তারা সময় চেয়েছে আরও তিন মাস।

রাজনৈতিক দলগুলোর ২০১৬ সালের আর্থিক লেনদেনের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন সোমবার জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। নিবন্ধিত ৪০ দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিসহ ৩৫টি দল তার আগেই প্রতিবেদন জমা দেয়।

জমা দেয়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট।

ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, এই দলগুলো দুই থেকে তিন মাস সময় চেয়েছে।

“প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে ইসি সচিবালয় নির্বাচন কমিশনের কাছে ফাইল উপস্থাপন করতে পারে।”

অডিট রিপোর্ট রেজিস্টার্ড চার্টার্ড একাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরপর তিন বছর কমিশনে এ প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে ইসির।

২০০৯ সাল থেকে নির্বাচন কমিশনে দলগুলো আয়-ব্যয়ের হিসাব দিলেও তা প্রকাশ করে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। দলের সম্মতি ছাড়া এ হিসাব প্রকাশ করা হয় না বলে তাদের যুক্তি। তবে গত বছর আদালত অডিট রিপোর্ট প্রকাশের বিষয়ে রায় দেয়। হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, যে কোনো ব্যক্তি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন দলের সম্মতি ছাড়াই তা প্রকাশ করতে পারবে।

আয় কমেছে আওয়ামী লীগের
আওয়ামী লীগের দলীয় আয় গতবছর বেশ খানিকটা কমেছে; সব মিলিয়ে দলের তহবিলে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য তারা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছে।

সোমবার দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ২০১৬ সালের আয়-ব্যয়ের এই হিসাব বিবরণী জমা দেয়। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে চার কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৯ টাকা।

এই হিসেবে এক বছরে দলের তহবিলে যোগ হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৯ টাকা। আর আগের জমা মিলিয়ে বর্তমানে আওয়ামী লীগের তহবিলে আছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৪৪১ টাকা। ২০১৫ সালের যে হিসাব বিবরণী আওয়ামী লীগ গতবছর জমা দিয়েছিল, তাতে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় দেখানো হয়েছিল ৩ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৯ টাকা।

আর ভোটের বছর ২০১৪ সালে নয় কোটি ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৩ টাকা আয়ের বিপরীতে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২১ টাকা ব্যয়ের তথ্য দিয়েছিল টানা সাড়ে আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি। হিসাব জমার পর আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের তহবিলের বড় একটি অংশ আমরা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখি। বাকি একটি অংশ নিয়মিত ব্যয়ের জন্য রেখে দেই। এ বছর আমরা ব্যাংকে আমানত রেখে সুদ পেয়েছি এক কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৬ টাকা।”

ব্যাংক আমানতের সুদ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় কমিটি, সহ-সম্পাদক, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের ফি এবং সংসদ সদস্য, উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিক্রি, অনুদান এবং ব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থকে দলের আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে হিসাব বিবরণীতে। আর ব্যয়ের খাত হিসেবে কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, আপ্যায়ন ও অন্যান্য খরচ, কেন্দ্রীয়/জনসভা, নির্বাচনী অফিস ব্যয়, পত্রিকা প্রকাশনা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের তথ্য দেওয়া হয়েছে।

আয় বেড়েছে বিএনপির
টানা দুই বছর ঘাটতি পর এবার নির্বাচন কমিশনে দেওয়া আর্থিক বিবরণে দলের তহবিলে ১৪ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে বিএনপি। গত বছর কাউন্সিলে তোলা চাঁদা থেকে এবার তহবিলে এই অর্থ জমা থাকে বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার বিকালে নির্বাচন কমিশনে ২০১৬ পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, এ পঞ্জিকা বছরে বিএনপির আয় ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫২ টাকা। উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৮৭৮ টাকা।

“কাউন্সিলে আমরা কিছু ডোনেশন পেয়েছি, তাই এবার উদ্বৃত্ত হয়েছে,” বলেন তিনি।

২০১৫ সালে বিএনপির ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল এক কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা। বছরের শুরুতে দলের হাতে ছিল ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪৫ টাকা। সমাপনী ব্যালেন্স ছিল ২ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার ৪৬১ টাকা। ২০১৪ সালে বিএনপি দুই কোটি ৮৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৪ টাকা আয়ের বিপরীতে তিন কোটি ৫৩ লাখ তিন হাজার ৫৯০ টাকা ব্যয় দেখিয়েছিল।

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি জাপার
দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২০১৬ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাবে আগের বারের মতো এবারও আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখিয়েছে। গত রোববার জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বাক্ষরিত আর্থিক বিবরণী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর জমা দেয় দলটির একটি প্রতিনিধি দল।

ওই আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়, ২০১৬ সালে জাপার আয় ছিল ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩০৩ টাকা। ব্যয় বেশি হয়েছে ৩২ লাখ ২২ হাজার ৮০৩ টাকা।

বিবরণীতে মোট নয়টি খাত থেকে দলের আয় দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- সদস্য, কর্মী ও কার্য উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের চাঁদা, ফরম বিক্রি, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার অনুদান, দলের পত্রিকার সাময়িকী ও বইপত্র বিক্রি এবং দলের বিভিন্ন সংস্থা বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে আসা আয়। আর ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৭টি খাতে। এগুলো হচ্ছে- প্রাতিষ্ঠানিক, বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল, সভা, প্রচারণা, সাংগঠনিক কার্যক্রম, বিজ্ঞাপন, প্রকাশনা কার্যক্রম, জাতীয় বিভিন্ন দিবস পালন, ত্রাণ কার্যক্রম, ভ্রমণ, ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠান, আপ্যায়ন এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদ কেনা ইত্যাদি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত