সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৩:৪২

ধীরে ধীরে আইসিসি পর্যন্ত যেতে চাই: নাফিসা কামাল

বিপিএলের প্রথম আসর দিয়েই ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে শুরু হয়েছিল আনুষ্ঠানিক পথচলা। তবে বাবার হাত ধরে ব্যাট-বল আর ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচয়টা সেই ছোট্ট বেলাতেই। সময়ের সঙ্গে প্রগাঢ় হয়েছে সে ভালোবাসা, যা বিপিএলের তৃতীয় আসরেই রূপ নিয়েছে এক দক্ষ সংগঠকের প্রতিচ্ছবিতে।

তবে স্বপ্নটা আরো বড়— বিসিবি এবং আইসিসিতে করতে চান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। পরিকল্পিত এবং পেশাদারি মনোভাবের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজির অসাধারণ সাফল্যের নেপথ্য ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিসা কামালের বিশেষ সাক্ষাত্কারে ...

বিপিএলের প্রথম দুই আসরের চেয়ে সংগঠক হিসেবে অনেক পরিণত মনে হয়েছে...

সিলেটের মালিকানায় আমাদের খুব ছোট একটা শেয়ার ছিল। তাই সেভাবে সবকিছু করতে পারিনি। এবার বাবা (মুস্তফা কামাল) আমার হাতেই পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। আমিও পরিকল্পিতভাবেই এগিয়েছি। এবার শুরু থেকেই কাজ করেছি ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্র্যান্ডিং নিয়ে, এর পর দল গুছিয়েছি।

একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বিপিএল আমার সূচনা। এখান থেকে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। আমার বাবা যেমন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছেন, আমিও ঠিক সেখানে পৌঁছতে চাই। আমার প্রথম লক্ষ্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। খুব শিগগিরই হয়তো আবাহনীর সঙ্গে কাজ শুরু করব। এর পর বিসিবিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে চাই। ধীরে ধীরে আইসিসি পর্যন্ত যেতে চাই।

ভবিষ্যতে আমরা বিসিবি এবং আইসিসিতেও তাহলে আপনাকে দেখতে পাচ্ছি?

আমার সে রকমই লক্ষ্য। বাবার মতো ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসনগুলোয় প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, চেষ্টা এবং পরিশ্রম করলে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু নয়; সেভাবেই আমি এগিয়ে যেতে চাই।

ক্রিকেটে আসার আগ্রহ কীভাবে হলো?

আমি একটি ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারের মানুষ। বাবা একজন বিখ্যাত ক্রীড়া সংগঠক। তাকে দেখে, তার অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটের প্রতি আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত স্টেডিয়ামে প্রচুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। সেসব খেলা দেখে ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা জন্মেছে। এ ভালোলাগা আর বাবার প্রেরণায় বিপিএলে যুক্ত হয়েছি।

বিপিএলের মতো এত বড় টুর্নামেন্টে আপনিই একমাত্র মহিলা, যে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির চেয়ারম্যান; বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

যার যোগ্যতা আছে সে-ই এগিয়ে যাবে। নারী বা পুরুষ কোনো বিষয় নয়। তাছাড়া ক্রিকেট আমার রক্তে মিশে আছে। সে কারণেই ক্রিকেটে আসা। আর এবারের বিপিএলের সফলতা আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করছে।

বিপিএলে আপনার দল সবার আগে ফাইনালে। যদিও বিদেশী খেলোয়াড়দের আসা-যাওয়ায় অনেক হিসাব-নিকাশ কষতে হয়েছে...

অবশ্যই ভালো লাগছে। যদিও টুর্নামেন্টের শুরুতে কিন্তু আমরা ফেভারিট ছিলাম না। আমার কিছুটা শঙ্কা ছিল দলের পারফরম্যান্স নিয়ে। কিন্তু আমাদের কোচ ও অধিনায়ক বরাবরই আমাকে নির্ভার থাকতে বলেছে। কারণ শক্তির বিচারে অন্য দলগুলোর তুলনায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। তবে মাঠের বাইরে কিন্তু কুমিল্লা একটি পরিবার। সবাই সবকিছু শেয়ার করেছে, এতে দলের মনোবলও ধীরে ধীরে বেড়েছে। আর মাশরাফির মতো অধিনায়ক আসলে অনেক কিছু অনেক সহজ করে দিয়েছে।

ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য নিশ্চয়?

অবশ্যই। আমি আশাবাদী, আমার দল চ্যাম্পিয়ন হবে। ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারলে অপূর্ণতা থেকে যাবে। শেষ পর্যন্ত যে ফাইনালে উঠতে পেরেছি, তার পেছনে সব কৃতিত্ব কিন্তু খেলোয়াড়দেরই। বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রশংসা না করলেই নয়। তার বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বই আমাদের এ পর্যায়ে পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। আমি তাকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি দলকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে তুলেছেন বলেই আজ আমরা ফাইনালে। এবার শেষ হাসিটা হাসতে চাই।

কুমিল্লা নিয়ে লক্ষ্য কী?

এ পরিবারটা নিয়েই এগোতে চাই। কুমিল্লায় একটি স্টেডিয়ামের জন্য এরই মধ্যে বাবা ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ওখানে বিশ্বমানের একটি একাডেমি করতে চাই, যাতে কুমিল্লা থেকে আমরা আরো কিছু খেলোয়াড় তৈরি করতে পারি।

চ্যাম্পিয়ন হলে বোনাস দেয়া হবে?

আমরা এরই মধ্যে খেলোয়াড়দের শতভাগ পারিশ্রমিক দিয়ে ফেলেছি। যদি আমরা চ্যাম্পিয়ন হই, তাহলে বোনাস তো দেয়া হবেই, সেই সঙ্গে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বিদেশ সফরেও নিয়ে যাওয়া হবে।

বিপিএল শেষ হওয়ার পথে। আয়োজন কেমন হলো? আর ব্যবসায়িকভাবে টুর্নামেন্ট সফল করতে কোনো পরামর্শ...

এবার আসলে টুর্নামেন্টটি বাঁচিয়ে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। তাই গ্ল্যামার বা ব্র্যান্ডিং নিয়ে আশানুরূপ কাজ হয়নি। এর পরও এবারের বিপিএল খুবই সার্থক একটি টুর্নামেন্ট। বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় উঠে এসেছে, যারা ভবিষ্যতে দেশের সম্পদে পরিণত হবে। আবু হায়দার রনির মতো খেলোয়াড়কে আমরা পেয়েছি। আমি মনে করি, সে অনেক দূর যাবে। তবে হ্যাঁ এটি ঠিক, ব্যবসায়িকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কিন্তু লাভ তুলতে পারছে না। এজন্য কিছু পরামর্শ নিয়ে আমরা বোর্ডের সঙ্গে বসব। বিশেষ করে টিভিস্বত্ব ও ম্যাচের লভ্যাংশ নিয়ে। আইপিএলে এগুলো তিন ভাগে ভাগ হয়। দুই দল আর বোর্ড। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিকে এখানে বিনিয়োগে উত্সাহিত করতে হবে।

সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত