স্পোর্টস ডেস্ক

০৩ জুন, ২০১৬ ১৪:০২

নাবালিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক আর সেক্স-টেপ কেলেঙ্কারিতে ফ্রান্স দল থেকে বাদ বেঞ্জেমা

করিম বেঞ্জামা। সাম্প্রতিককালের মধ্যে ফরাসি ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা তিনই। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী যাঁর বার্ষিক আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী রিয়াল মাদ্রিদের নিয়মিত ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়ে ২৭ গোল করে ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা স্কোরার হওয়ার দৌড়েও রয়েছেন। সেই করিম বেঞ্জেমাই বাদ ফ্রান্সের ইউরো কাপের দল থেকে!

দেশের মাটিতে আয়োজিত টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের সতীর্থরা যখন মাঠে নামবেন, দর্শক হিসাবে খেলা দেখা ছাড়া কার্যত কিছুই করার থাকবে না বেঞ্জেমার। তাঁর বাদ পড়া নিয়ে বিতর্কের জল বহু দূর গড়িয়েছে। এমনকি, জাতীয় কোচ দিদিয়ে দেশেঁমের সিদ্ধান্তকে বর্ণবিদ্বেষমূলক বলে তোপ দেগেছেন 'মুসলিম' ধর্মালম্বি বেঞ্জেমা নিজেই। প্রশ্ন উঠছে, কী এমন হল যে, বেঞ্জেমা কোচের চক্ষুশূল হয়ে পড়লেন?

জানা গেছে, বেঞ্জেমা বাদ পড়ার নেপথ্যে  তাঁর অন্ধকার জগতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগই মূল কারণ। যার জন্য এমনকি, পুলিশি হেফাজতে রাত্রিযাপনও করতে হয়েছে ২৮ বছরের তারকাকে।

ফ্রান্সের লিয়ঁ-র পূর্ব শহরতলি বহঁ তেরাইলঁ-এ বেড়ে ওঠা আলজেরিয় বংশোদ্ভোত  বেঞ্জেমার। শৈশবের কোচেরা তাঁকে ‘কোকো’ বলে ডাকতেন। বেঞ্জেমার দিন কাটত গলিতে গলিতে ফুটবল খেলে ও বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করে। বেঞ্জেমা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ছোট থেকেই তিনি আবেগপ্রবণ। মোটর রেসিং ভালবাসতেন। পছন্দের রেসিং তারকার নাম ভ্যালেন্তিনো রোসি। প্রিয় সিনেমা আমেরিকান গ্যাংস্টার।

ঘটনাচক্রে, বেঞ্জেমার নিজের শহর তেরাইলঁ বরাবরই ‘গ্যাংস্টার’দের আখড়া। অধিকাংশই জন্মসূত্রে আফ্রিকার। বেঞ্জেমা নিজেও আলজিরিয়ার বংশোদ্ভূত। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কর্মহীন। অপরাধের সংখ্যাও তাই খুব বেশি। ২০১৩ সালে ফরাসি পুলিশ একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছিল, তেরাইলঁই পূর্ব লিয়ঁ-র একমাত্র এলাকা, যেখানে অপরাধের সংখ্যা কমার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও অপরাধপ্রবণ এলাকায় বেড়ে ওঠার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সব রকম প্রতিশ্রুতি ছিল বেঞ্জেমার মধ্যে। প্রতিভাবান। ফুটবল মাঠে নজর কাড়া সাফল্য। প্রথমে ক্লাব ও পরে জাতীয় দলের হয়ে সফল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো মহাতারকা তাঁর সতীর্থ। কিন্তু সেই বেঞ্জেমা-ই এমন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন যে, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি এরিক কঁতোনা থেকে শুরু করে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্‌স প্রত্যেকেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

বিতর্ক আর বেঞ্জেমা যেন সমার্থক হয়ে পড়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় হল সতীর্থ ম্যাথিউ ভালবুয়েনার সেক্স-টেপ তৈরি করে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার গুরুতর অভিযোগ। সালটা ২০১৪। ফ্রান্সের ফুটবলার ভালবুয়েনার ঘনিষ্ঠ একজন একটি ভিডিও দেখে চমকে উঠেছিলেন। এ যে ভালবুয়েনার সেক্স-টেপ! বিতর্ক আরও বড় আকার ধারণ করল বেঞ্জেমার বিরুদ্ধে ভালবুয়েনা ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ তোলায়। ভালবুয়েনার আইনজীবী অভিযোগ করলেন, এক লক্ষ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় এক কোটি টাকা) না দিলে সেক্স-টেপ ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বেঞ্জেমা ও তাঁর ছোটবেলার বন্ধু করিম জেনাতি। ঘটনাচক্রে জেনাতি আবার তেরাইলঁ-এর বাসিন্দা। ভালবুয়েনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বেঞ্জেমাই ওই সেক্স-টেপ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

গত বছরের জুন মাসে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ভালবুয়েনা। তদন্তে দেখা যায়, বেঞ্জেমা ও জেনাতি-র মধ্যে বেশ কয়েকবার ফোনে কথোপকথন হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৮ নভেম্বর মাদ্রিদ থেকে ভার্সেলিস ডেকে পাঠানো হয় বেঞ্জেমাকে। সেখানে তাঁকে আটক করে সারা রাত জেরা করা হয়েছিল। বেঞ্জেমা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি নাবালিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও উঠেছিল বেঞ্জেমার বিরুদ্ধে। সেই থেকেই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের সমর্থন হারাতে শুরু করেন তিনি।

যার সবচেয়ে বড় খেসারত বেঞ্জেমাকে হয়তো দিতে হল জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে হয়তো তিনি এরপরেও খেলবেন। কিন্তু তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের পাশে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন বসে গিয়েছে।

সূত্র: ফোবর্স ম্যাগাজিন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত